৯৬ আলোকচিত্রীর ক্যামেরার চোখে বিপন্ন নদী দেখলেন দর্শকরা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

নদী ও তার পাড়ের মানুষের জীবন নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। গতকাল শুক্রবার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে ভীড় ছিল নানা বয়সী মানুষের। এ প্রদর্শনীতে দেশের ৯৬ আলোকচিত্রী ক্যামেরার চোখে চোখ রেখে দর্শকরা দেখেছেন দখল, দূষণে বিপন্ন নদী। নদী পাড়ে কলকারখানার বর্জ্যে গলাটিপে ধরা নদীর জীবন। কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন নদীর আকাশ ঢেকে যাওয়া। আবার কোথাও সুন্দরের প্রসারিত দু’ হাতে নদী অনন্য রূপে সাজিয়েছে এই বদ্বীপ ভূমিকে। শীতের সকালে স্নিগ্ধ নদীর জলে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে জীবিকার জন্য চলমান জীবনও ধরা পড়েছে ক্যামেরায়।

এই প্রদর্শনী আয়োজন করেছে ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ। সহযোগিতায় রয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও নেদারল্যান্ড দূতাবাস। ইতোমধ্যে এই প্রদর্শনীর দুইটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে খুলনা ও রাজশাহীতে। প্রদর্শনী চলাকালে বিকেলে সংক্ষিপ্ত কথামালায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি বাসব শীল ও চট্টগ্রাম নদীরক্ষা আন্দোলনএর সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান।

. মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, নদী শুমারি হয়েছে। যাতে অনেক বিভ্রান্তি থাকলেও সেটি ইতিবাচক। দেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ মানুষ ও সরকার মিলে চেষ্টা করলে এটা সম্ভব। বাসব শীল বলেন, মানুষের শরীরের যেমন শিরা উপশিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পরিবেশের জন্য নদীও তেমন। তাই নদীর পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র বলা হলেও কর্ণফুলী নদীতে সময়ের সাথে সাথে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। এখন কর্ণফুলী নদীতে আগের মতো মাছ দেখা যায় না।

আলিউর রহমান বলেন, দেশের নদীগুলোর একটি প্রোফাইল তৈরি করা জরুরি। তাতে ভবিষ্যতে যে কেউ নদী নিয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাবে। নদীর অবস্থা সম্পর্কে বিশদ জানতে পারবে।

ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের গবেষক মো. সাকিবুল হক সাকি বলেন, নদীর জীবন ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন। প্রান্তিক নদীগুলোকে মানুষের সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও রয়েছে। সাধারণত নদীর ছবি প্রদর্শনীতে পদ্মা, মেঘনার মতো বড় নদীগুলোকেই দেখা যায়। তবে এই প্রদর্শনীতে হরিপুর নদী, যাদুকাটা নদীর মতো আপাত অপরিচিত নদীগুলোকেও দেখানো হয়েছে লেন্সের ভেতরে।

প্রদর্শনী দেখতে আসা আবৃত্তিশিল্পী অনুপম শীল বলেন, দূষণের কালো অমানিশা ক্রমশ বিষাক্ত করে তুলছে বাংলাদেশকে। প্রাণ ও প্রকৃতিকে নিয়ে মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহার সর্বনাশ করে চলেছে বাংলাদেশের। যার অন্যতম শিকার নদী। নদীমাতৃক বাংলাদেশে বড় বিপদেই আছে নদীগুলো। ক্রমশ জীর্ণ হয়ে আসা নদী আর তার প্রাণ প্রকৃতির দূষণের গল্প নিয়ে আয়োজিত প্রদর্শনী সত্যিই প্রশংসনীয়। দেশের বহু নদী ও তার পাড়ের মানুষের জীবনের গল্প জানতে পেরেছি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

সাত বছরের সন্তান অপরাজিতাকে নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছেন বিমলেন্দু দাশ। তিনি বলেন, নদী সম্পর্কে সন্তানকে জানাতে চাই। নৌকা, জাহাজ ইত্যাদির বাইরেও নদীকে ঘিরে কতো কিছু থাকে, সেটাও দেখেছি প্রদর্শনীতে। শিল্পকলা একাডেমিতে চিত্রাঙ্কন শেখার ফাঁকে প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোস্তাইন হোসেন। তিনি বলেন, নদীর ছবি দেখে ভাল লেগেছে। নদী দূষণ দেখে খারাপও লেগেছে। এই পরিস্থিতি থেকে নদীকে বাঁচাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপির কেন্দ্রীয় ত্রাণ তহবিলে মহানগর বিএনপির অনুদান প্রদান
পরবর্তী নিবন্ধস্বল্প খরচে হার্টের উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছে চট্টগ্রামবাসী