৯০ হাজার মামলার ৩০ হাজারই মাদক সংক্রান্ত

মাদক মামলা নিষ্পত্তিতে কক্সবাজারে হচ্ছে পৃথক ট্রাইব্যুনাল

কক্সবাজার প্রতিনিধি | রবিবার , ১২ মার্চ, ২০২৩ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এখন প্রায় ৯০ হাজার। যার মধ্যে মাদক সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যাই ৩০ হাজারের বেশি। আর এই মাদক মামলাগুলো দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য কক্সবাজারে একটি পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং সেই প্রস্তাব সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে এখন চূড়ান্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

গতকাল শনিবার কক্সবাজার বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আদালতে বিচারাধীন ৩০ হাজার মাদকের মামলা দ্রুততম সময়ে নিষ্পত্তি করার জন্য একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মর্যাদার বিচারক নিয়োগ দিয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং সেই প্রস্তাব এখন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে চূড়ান্ত অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এ বছরের মধ্যে এই প্রস্তাব অনুমোদন হলে কক্সবাজার বিচার বিভাগে মাদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে একটি পৃথক ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে এবং তখন আইনি প্রক্রিয়ায় কিছুটা হলেও মাদক পাচার রোধ করা যাবে।

কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ও সিনিয়র সহকারী জজ সাজ্জাতুন নেছা ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মো. আসিফের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে জেলা জজ জানান, গত এক বছরে কক্সবাজারে প্রায় ১২ হাজার ফৌজদারি মিচ মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ। আর বর্তমানে বিচারাধীন প্রায় ৯০ হাজার মামলার মধ্যে ৩০ হাজার মাদকের মামলা ছাড়াও এক হাজারের বেশি রয়েছে হত্যা মামলা। এছাড়া নারী নির্যাতন, মানবপাচার, মারামারী ও দেওয়ানী মামলা মিলে অমাদক সংক্রান্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আর এ মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আরো ৪ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টি করে সেগুলো কার্যকর করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজারে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ রয়েছেন ২ জন।

জেলা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, কক্সবাজার জেলায় বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক জোন স্থাপন করা হচ্ছে। বিশাল বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এজন্য জমির ক্ষতিপূরণ বাবদই সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তিনি বলেন, এর ফলে এখানকার জমির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বেড়েছে মামলা মোকদ্দমাও। এজন্য আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হচ্ছে।

জেলা জজ বলেন, বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করছে কক্সবাজার জেলা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও দিন দিন অপরাধ বাড়ছে। তবে এজন্য এককভাবে কারো উপর দায় না চাপিয়ে রাষ্ট্রের সকল সংস্থা, বেসরকারি সংস্থা, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আইনশৃক্সখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।

বিচার বিভাগীয় সম্মেলেনে ‘দেওয়ানী ও ফৌজদারী মোকদ্দমার বিচার নিষ্পত্তিতে উদ্ভূত সমস্যা ও বিলম্বের কারণ সমূহ চিহ্নিতকরণ এবং উল্লেখিত সমস্যা হতে উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল১ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন এবং ট্রাইব্যুনাল২ এর বিচারক (জেলা জজ) মো. নুরে আলম, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ৩ আবদুল কাদের, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ৫ নিশাত সুলতানা, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ১ মাহমুদুল হাসান, সিনিয়র সহকারী জজ সুশান্ত প্রাসাদ চাকমা, চকরিয়া চৌকি আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ জিয়া উদ্দিন আহমদ, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল মনসুর সিদ্দিকী, হামিমুন তানজীন, সাঈনীন নাহী, আখতার জাবেদ, মোহাম্মদ এহসানুল ইসলাম, সহকারী জজ (টেকনাফ) ওমর ফারুক, সহকারী জজ (কুতুবদিয়া) ফাহমিদা সাত্তার, পিবিআই এর পুলিশ সুপার সরোয়ার আলম, সিআইডির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাহেদ মিয়া, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) শাকিল আহমদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি ডা. ইমরুল কায়েস, ৩৪ বিজিবির প্রতিনিধি হারুনর রশীদ, র‌্যাব১৫ এর প্রতিনিধি এএসপি মো. জামিলুল হক, জেলা সদর হাসপাতালের প্রতিনিধি ডা. মোহাম্মদুল হক, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, জিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উত্তর) মো. আনোয়ার হোসেন সরকার, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (দক্ষিণ) সরওয়ার আলম, জেলা কারাগারের জেলার শওকত হোসেন মিয়া, শহর সমাজসেবা অফিসার মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনৈতিকতা জীবনকে করে সুন্দর
পরবর্তী নিবন্ধশিশু কন্যাকে বাইরে রেখে গৃহবধূর আত্মহত্যা