৮ টন ধারণ ক্ষমতার সড়কে চলছে ৩৬ টন পাথর বোঝাই ডাম্পার ট্রাক

বান্দরবান প্রতিনিধি | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে পরিবহন চলাচলের কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো স্থায়ীত্ব হারাচ্ছে। ৮ থেকে ২২ টন ধারণ ক্ষমতার সড়কগুলোতে নিয়মনীতি না মেনে দশ চাকার ডাম্পার ট্রাকগুলো ৩৬ টন ওজনের অতিরিক্ত পাথর বোঝাই নিয়েই চলাচল করছে। এতে সরকারি অর্থায়নে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো নির্মাণের মাস বছর না পেরুতেই ভেঙে যাচ্ছে। পাহাড়ে জনপদে দীর্ঘদিন প্রতীক্ষার পর সরকারি অর্থায়নে নির্মিত রাস্তাগুলো অতিরিক্ত ওজনের ডাম্পার ট্রাকের আঘাতে দ্রুতই নষ্ট হয়ে পড়ছে, এতে স্থানীয় জনসাধারণের ভোগান্তি প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, সড়ক পাকা হলেই যেকোনো ওজনের যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয় না। অঞ্চল ভেদে সড়কের যানবাহন ধারণ ক্ষমতা ভিন্ন হয়। গ্রামাঞ্চলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তৈরি সড়কের সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ৮ টন এবং উপজেলা এলাকায় ১২ টন। জেলা পর্যায়ের স্থানীয় মহাসড়কে সর্বোচ্চ ২২ টন সড়কের ধারণ ক্ষমতা। তবে সড়ক আইনের এ হিসেব কাগজে থাকলেও বাস্তবে সড়কগুলোতে নেই। প্রতিটি সড়কে ধারণক্ষমতা কয়েকগুণ বেশি ওজনের যানবাহন চলছে হরহামেশা। ফলে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় রাস্তাগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। শহরাঞ্চলের নষ্ট সড়ক সংস্কার হলেও গ্রামীণ সড়কগুলো হচ্ছে না। যে কারণে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই রাস্তা গর্তে পরিণত হচ্ছে। বাড়তি ওজন বহন করার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

ভূক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দার সাজ্জাদ, সৈয়দ আলম, রেদোয়ান অভিযোগ করে বলেন, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কে আইন অমান্য করে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করছে। বিশেষ নির্মাণ কাজের পাথর বোঝাই দশ চাকার ডাম্পার ট্রাকগুলো ৩০ থেকে ৪০ টন ওজন নিয়ে চলাচল করছে। ওভারলোড ভারী যানের চাকার আঘাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে। কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে স্থানীয় জনসাধারণের ভোগান্তি বেড়েছে। গ্রামীণ সড়কগুলো নির্মাণের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়, অথচ নির্মাণের কয়েকমাস না পেরুতেই সড়কগুলো অতিরিক্ত লোডের যানবাহনের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। সড়কের স্থায়িত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের নজরদারি ও কঠোর প্রদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওভারলোডের কারণে বান্দরবানকেরানীহাট সড়ক, বান্দরবানবাঙালহালিয়া সড়ক, লামাআলীকদম সড়ক, বাইশারীঈদগড় সড়ক, ফাঁসিয়াখালীইয়াংছা সড়ক, রোয়াংছড়ি সড়ক, সূয়ালকলামা সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে দেবে গেছে, কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাসাউর বলেন, ওভারলোডের কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো দীর্ঘস্থায়ী টেকসই হচ্ছে না। ওভার লোডের কারণে সড়কগুলোতে বছরে কোটি কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে। সড়কের ক্ষতিরোধে সড়কের মাখায় ব্যারিকেড দেয়া হলে নিয়ন্ত্রণ হত ওভার লোড পরিবহন। এছাড়াও চাষাবাদের জমির টেক্টরগুলোও সড়কে চলাচলের কারণে সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এগুলো নিয়ন্ত্রণে স্থানীয়দেরও সচেতন হতে হবে।

এ প্রসঙ্গে বান্দরবান সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ওভারলোডিং একটি গুরুতর সমস্যা। সড়কের সুরক্ষা এবং দুর্ঘটনা রোধে ওভারলোডিং প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ওজনের কারণে সড়কের কার্পেট উঠে যায়, রাস্তা দেবে যায় এবং ফাটল দেখা দেয়। এতে সড়কের স্থায়িত্ব কমে যায় এবং নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই মেরামতের প্রয়োজন হয়। পণ্যবাহী গাড়িগুলে ওজনের সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত মাল বহণের কারণেই সড়কগুলোর স্থায়িত্ব হারাচ্ছে। এতে বছরে সরকার দেশে শতশত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবসুন্ধরা আবাসিকে ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক নিয়ে তদন্ত চলছে : পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপস নয়, নিশ্চিহ্ন করব : মির্জা ফখরুল