এবারের (২০২২ সালের) এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ–৫ অর্জন করেছে মোট ১২ হাজার ৬৭০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ৯ হাজার ৩৭২ জনই শহরের (মহানগরের)। যা মোট জিপিএ–৫ ধারীর ৭৪ শতাংশ! আর মহানগর বাদ দিয়ে ৫ জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩ হাজার ২৯৮ জন।
অর্থাৎ মহানগরীর বাইরে জিপিএ–৫ অর্জনকারী শিক্ষার্থীর হার মাত্র ২৬ শতাংশ। গত বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়– মহানগরীর বাইরে শুধু চট্টগ্রাম জেলায় জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ১৬০ জন। এছাড়া কক্সবাজার জেলায় ৭১০ জন, রাঙামাটি জেলায় ১৯৫ জন, বান্দরবান জেলায় ১১৭ জন ও খাগড়াছড়ি জেলায় মাত্র ১১৬ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পেয়েছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়– জিপিএ–৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সবচেয়ে করুণ চিত্র তিন পার্বত্য জেলায় (বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি)। এই তিন জেলায় সব মিলিয়ে মাত্র ৪২৮ জন শিক্ষার্থী এবার জিপিএ–৫ পেয়েছে। যা চট্টগ্রামে মোট জিপিএ–৫ ধারীর ৩.৩৭ শতাংশ।
শুধু এবছরই নয়, জিপিএ–৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের এই চিত্র যেন বরাবরই ধারাবাহিক। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ–৫ পায় ২ হাজার ৮৬০ জন। এর মাঝে তিন পাবর্ত্য জেলায় সব মিলিয়ে মাত্র ৪৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পায়। যা মোট জিপিএ–৫ ধারীর ১.৫ শতাংশ।
২০১৮ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে মোট ১ হাজার ৬১৩ জন জিপিএ–৫ ধারীর মধ্যে এই তিন জেলায় জিপিএ–৫ পায় মাত্র ১৬ জন। এর মধ্যে বান্দরবানে ১১ জন, খাগড়াছড়িতে ৪ জন ও রাঙামাটিতে মাত্র ১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পায়।
একই ভাবে ২০১৭ সালের এইচএসসিতে মোট ১ হাজার ৩৯১ জন জিপিএ–৫ ধারীর মধ্যে তিন পার্বত্য জেলায় জিপিএ–৫ পায় মাত্র ১৮ জন।
যা মোট জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মাত্র ১.৩১ শতাংশ।
১৮ জনের মধ্যে বান্দরবানে ১০ জন, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে ৪ জন করে শিক্ষার্থী জিপিএ–৫ পায়। ২০২০ সালে পরীক্ষা ছাড়া (অটোপাস) মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ করা হয়। আর ২০২১ সালে সব বিষয়ের পরিবর্তে কম সংখ্যক বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ে (তাও সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে) ফল প্রকাশ করা হয়। সে হিসেবে ২০২০ ও ২০২১ সাল বাদ দিয়ে আগের বছরগুলোর তুলনায় পার্বত্য তিন জেলায় জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবার কিছুটা বেড়েছে। অবশ্য তাও হাতে গোনা।
ইংরেজির পাশাপাশি বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে যোগ্য ও অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকাসহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও সংকটের কারণে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বরাবরই পিছিয়ে থাকছে বলে মনে করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর জাহেদুল হক। আর এসব সীমাবদ্ধতার কারণেই প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর শিক্ষার্থীদের জিপিএ–৫ পাওয়াটা অনেক কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
একই মত শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলামেরও। তিনি মনে করেন– শহরে শিক্ষকের ছড়াছড়ি। কিন্তু গ্রামাঞ্চলের চিত্র ঠিক এর বিপরীত। খুব নাজুক বলা যায়। আর পার্বত্য অঞ্চলে তো কথাই নেই। ইংরেজি, আইসিটি এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে দক্ষ বা যোগ্য শিক্ষক গ্রামাঞ্চলে খুঁজে পাওয়াই তো কঠিন। আর ভালো শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থীরা শিখবে কোথা থেকে।
তাই জিপিএ–৫ প্রাপ্তির কথা বাদ দিয়ে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাসের হারই খুব শোচনীয়। যারা পাস করে, তারা কোনো রকমে পাস করছে। এমন শোচনীয় পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে এসব অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ শিক্ষক নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন সংকটের আশু সমাধান জরুরি। তাছাড়া ছেলে–মেয়ের পড়া–লেখাসহ সব বিষয়ে অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষাবোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম।