নগরে চলাচলকারী ৭০ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক গতিসীমা অমান্য করেছে। এছাড়া নগরের সড়কগুলোতে চলাচল করা ৪৪ শতাংশ যানবাহনই বিআরটিএ নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলে না। সপ্তাহের কর্ম দিবসের তুলনায় ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘনের হার বেশি। কর্ম দিবসে গতিসীমা লঙ্ঘনের হার ৪২ শতাংশ হলেও ছুটির দিনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে। গতিসীমা লঙ্ঘন করা নগরে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
চট্টগ্রাম শহরে সড়ক ব্যবহারে আচরণগত ঝুঁকি পর্যবেক্ষণে পরিচালিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। বৈশ্বিক সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি (বিআইজিআরএস) কর্মসূচির আওতায় জেএইচ–আইআইআরইউ ও সিআইপিআরবি যৌথ উদ্যোগে ‘রোড সেফটি রিস্ক ফ্যাক্টরস ইন চট্টগ্রাম: স্ট্যাটাস সামারি রিপোর্ট ২০২৪’ শিরোনামে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়।
গতকাল বুধবার নগরের একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এই জরিপের ফল উপস্থাপন করেন জেএইচ–আইআইআরইউ–এর গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জনস হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট (জেএইচ–আইআইআরইউ), সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান। সিআইপিআরবি’র রোড সেফটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক কাজী বোরহান উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন। এসময় তথ্য সংগ্রহের স্থান নির্বাচন, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিসহ পুরো জরিপ প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন সিআইপিআরবির পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী।
প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, একটি শহরের আয়তনের তুলনায় যে পরিমাণ সড়ক থাকা প্রয়োজন, চট্টগ্রামে তা নেই। তাছাড়া বিভিন্ন বাস্তবিক কারণে সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষে সকল মানদণ্ড শতভাগ অনুসরণ করা সম্ভব হয় না। তবে আমরা আশাবাদী ভবিষ্যতে আমরা এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারবো। নগরে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা সিটি কর্পোরেশন একটি রোড সেফটি সেল করতে যাচ্ছি। যারা সড়কগুলোতে স্পিড সাইন ও গতি নিয়ন্ত্রক বসানোর মতো কারিগরি কাজগুলো সমন্বয় করবে। আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই জরিপের ফলাফল আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়ক হবে।
ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালের মে মাসে মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেন। এতে হাইওয়ে ও এঙপ্রেসওয়ের জন্য যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। পাশাপাশি সড়ক ও যানবাহনের ধরণ অনুযায়ী যানবাহনের গতিসীমা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে কর্তৃত্ব দেয়া হয়।
ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া জানান, চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট ২০২১–২৩ অনুযায়ী, রোড ক্রাশে নিহতদের ৯২ শতাংশই ছিলেন ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক–ব্যবহারকারী, যেমন পথচারী, মোটরসাইকেল, থ্রি–হুইলার আরোহী ইত্যাদি। ডিসেম্বর ২০২২ থেকে নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৈশ্বিক মানদণ্ড বিবেচনায় দেখা গেছে, শহরের ৩৪ শতাংশ যানবাহনই নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করেছে। লোকাল ও কালেকটর রোডে, ৪৫ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমা অমান্য করেছে। অবশ্য বিআরটিএর গতিসীমা নির্দেশিকা অনুসারে দেখা যায়, সকল ধরনের যানবাহন ও রাস্তা বিবেচনায় ৪৪ শতাংশ যানবাহন নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলে।
নগরের সড়কগুলোকে নিরাপদ করার জন্য গতিসীমা নির্দেশিকা অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিয়ে শিরিন ওয়াধানিয়া বলেন, সড়কগুলোতে প্রয়োজন অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রক, স্পিড সাইন ও যানবাহনের ধরন অনুসারে লেন নির্ধারণ করা জরুরি। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিআরটিএ’র উপ–পরিচালক (প্রকৌশল) কে এম মাহাবুব কবির ও সিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক উত্তর) রুহুল আমিন।