১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রাঙ্গুনিয়া উপজেলার শিলক ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে চলছে চিকিৎসাসেবা। ইউনিয়নটির ৩৫ হাজার বাসিন্দাদের পাশাপাশি কোদালা ইউনিয়ন ও কোদালা চা বাগানের হাজারো শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবার জন্য এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিই একমাত্র ভরসা। কিন্তু দীর্ঘ বছর ধরে তিন কক্ষ বিশিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রটির অবস্থা বেহাল এবং ব্যবহারে অনুপযোগী। স্থানীয়রা তা সংস্কারের আবেদন জানিয়ে এলেও বাস্তবায়ন হয়নি। অবশেষে স্থানীয় প্রবাসী, শিলক বাজার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর অর্থায়নে সংস্কার হচ্ছে শিলক ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, এমনিতেই জরাজীর্ণ ভবন। তার উপর অল্প বৃষ্টিতেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিনের চাল বেয়ে পড়ে বৃষ্টির পানি। বাইরের পানিও ঢুকে ভেতরে। এতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বারান্দা এবং ভেতরের মেঝেতে জলমগ্ন অবস্থার সৃষ্টি হয়। সেখানে কয়েকটি ইট দিয়ে হেঁটে ভেতরে প্রবেশ করে এবং ভেতরেও আরও কয়েকটি ইট দিয়ে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। তিন কক্ষবিশিষ্ট ভবনের প্রত্যেক দেয়ালেই রয়েছে বিশাল বিশাল ফাটল। দেয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে, জানালাও ভাঙাচোরা। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, শৌচাগার। বাইরে লাগানো সাইনবোর্ডটিও নষ্ট। দীর্ঘ বছর ধরে নতুন ভবন হবে হবে করেও হচ্ছে না। এদিকে ঝুঁকি নিয়ে চলছে চিকিৎসাসেবা। যেকোনো সময় ধসে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই স্থানীয়রা কোনো উপায় না পেয়ে নিজেরাই করছেন সংস্কার কাজ।
এ ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কথা হয় শিলক বাজারের ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হাসান চৌধুরীর সাথে। তিনি জানান, প্রবাসী, শিলক বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর ব্যক্তিগত আর্থিক অনুদানে এই জরাজীর্ণ ভবনটি সংস্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভেতরে হাঁটু সমান ভরাট করে মেঝে ঢালাই করে দেয়া হয়েছে। তিন কক্ষের প্রতিটি দেয়ালের ফাটল সংস্কার করে পুরো ভবন রঙ করে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভবনের টিনের চাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। এবার এই টিনগুলোও পরিবর্তন করা হবে। সব মিলিয়ে লাখ দেড়েক টাকা খরচ হতে পারে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় মো. সোলেমান মাস্টার জানান, ভবনটিতে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু এতো জরাজীর্ণ ভবনে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র চলতে পারে তা এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি না দেখলে বুঝা যায় না। স্থানীয়দের অনেক আকুতির পরও এতো বছরেও তা সংস্কার হয়নি। তাই কোনো উপায় না পেয়ে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এটি সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক উপ–সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল কর্মকর্তা মাসকুরা বেগম বলেন, জরাজীর্ণ ভবনের কথা আমি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছি। কিন্তু সাড়া পাচ্ছি না। এখানে বিদ্যুৎ সংযোগ, শৌচাগার নেই। এরপরও চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ৩৫ রকমের ওষুধ বিনামূল্যে দেয়া হয় বিধায় চিকিৎসা নিতে রোগীরা প্রতিদিন ভিড় জমায়। অনেক সময রোগী নিয়ে হিমশিম খেতে হয়। এলাকার মানুষ উদ্যমী হয়ে সংস্কার কাজে এগিয়ে আসায় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এই বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাব জমিলা বলেন, শিলক উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নতুন ভবন করার জন্য ইতোমধ্যেই অনুমোদন হয়েছে। আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। তবে এর আগেই স্থানীয়দের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি।