৭ মার্চ। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পটভূমিতে এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে রমনার রেসকোর্স ময়দানে এক সুবিশাল জনসমাবেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলাদেশের মুক্তির লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান জানান, জাতিকে স্বাধীনতার ডাক দেন। মাত্র আঠারো মিনিটের এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু যেন বাঙালিকে সকল দিক নির্দেশনা দিয়ে দিলেন। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে সেই আহ্বান। এই ভাষণ দেশের মানুষকে গভীরভাবে আন্দোলিত করে। বীর বাঙালি দৃপ্ত শপথে প্রস্তুত হয় মরণপণ লড়াইয়ের জন্য। ১৯৪৭–এর পর থেকে পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একের পর এক আন্দোলনের সিঁড়ি ডিঙিয়ে চূড়ান্ত ফসল হিসেবে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়, বেছে নেয় ষড়যন্ত্রের পথ। ১৯৭১–এর ২ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সারা বাংলায় চলে অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঔপনিবেশিক পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্বে বাংলার মানুষের প্রাণের দাবি ধ্বনিত হয়। ধর্ম–বর্ণ–গোত্র নির্বিশেষে লাখো মানুষে একাকার হয়ে গিয়েছিল ময়দান। রূপ নিয়েছিল জনসমুদ্রে। এদিনের ভাষণেই তিনি ডাক দেন মুক্তি সংগ্রামের। স্বতঃস্ফূর্ত এবং অনর্গল দিয়ে যান আগামীর রূপরেখা। এতে সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে প্রত্যাবর্তন, শহীদদের জন্য ক্ষতিপূরণ এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর সংবলিত চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ বাণী লক্ষ লক্ষ প্রাণে প্রতিধ্বনি তুলেছিল। গগণবিদারী স্লোগানে ফেটে যাচ্ছিল আকাশ। সেদিনের সেই ভাষণ প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে দেশের জন্যে প্রাণ বিসর্জন দেবার শপথে। দেশমাতৃকার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার এই দীক্ষা জাতি পেয়েছিল অবিসংবাদিত এই মহান নেতার সেদিনের সেই আহ্বানে ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ’। সাতই মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই আহ্বান আজও বাঙালিকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। এই ভাষণ যেন মুক্তির দলিল। বিশ্ব ইতিহাসের সেরা ১০০টি ভাষণের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ।