প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের ২০২৩ সালের নেওয়া দ্বিতীয় প্রকল্পে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া দ্বিতীয় প্রকল্পটি ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীনে রাউজানের রাঙামাটি সড়কপথে হালদা সেতুর কাছে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল করার যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল সেটি বাদ দিয়ে ওই টাকায় হালদাপাড়ের উত্তর–দক্ষিণ দুই প্রান্তে মৎস্য বিভাগের দুটি অফিস করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
জানা যায়, কয়েক বছর ধরে হালদা নদীতে মা মাছ ও ডলফিনের মৃত্যু নিয়ে পরিবেশবাদী ও হালদা বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের মাঝে মৎস্য বিভাগ নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় দ্বিতীয় প্রকল্পটি নিয়েছিল। এই প্রকল্পের অধীনে কাজ করার কথা ছিল নদীর দুই পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারী অংশে থাকা ৬টি পুরাতন হ্যাচারি সংস্কার করে মৎস্যজীবীদের জন্য অধিকতর সুযোগ–সুবিধা বৃদ্ধি করা, হ্যাচারিগুলোর সাথে থাকা পুকুর সংস্কার, ডিম সংগ্রহকারী ও মৎস্য কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, নদী দূষণমুক্ত ও নদীতে মাছ শিকারসহ অবৈধ তৎপরতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত, দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান করা, অংশীজনদের নিয়ে ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও গবেষণা করার। সর্বশেষ নেওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ২০২৭ সালের জুনে।
হালদার সুফলভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা জানা গেলেও এর বাস্তবতা এখনো দৃশ্যমান নয়। হ্যাচারিগুলোর অবস্থা আগের মতো ভঙ্গুর। নদীতে জাল পাতা বন্ধ হয়নি। নদীপাড়ে নৌ পুলিশের ক্যাম্প থাকলেও মা মাছ চোরদের বিরুদ্ধে অভিযান নেই।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের অধীনে এ পর্যন্ত ৯ জন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন করে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে রাউজান ও হাটহাজারীতে থাকা হ্যাচারিগুলোতে। বাকি তিনজনকে রাখা হয়েছে প্রকল্প পরিচালকের দপ্তরে।
রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে প্রকল্পের অধীনে নিয়োগ পাওয়া তিনজন তরিকুল ইসলাম, হেলি চাকমা ও প্রোহেলি চাকমার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, হ্যাচারিগুলো দেখাশোনা করার কাজে তাদেরকে পাঠানো হয়েছে। তারা মাঝেমধ্যে হ্যাচারিতে গিয়ে ঘুরে আসেন। একইভাবে কাজ করছেন হাটহাজারীতে নিয়োগ পাওয়া লোকজন।
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দুই দশক আগে হালদা নদীর রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের কাগতিয়া, রাউজান পৌর এলাকা গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরায় তিনটি হ্যাচারি প্রতিষ্ঠিত হয়। হাটহাজারী অংশে রয়েছে উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়ায় আরো তিন হ্যাচারি। সরেজমিনে হ্যাচারিগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কাগতিয়া ও পশ্চিম গহিরা হ্যাচারি বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মোবারকখীল হ্যাচারিটি মোটামুটি সচল আছে। হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও নির্মাণগত ত্রুটির কারণে এসব হ্যাচারিতে কাঙ্ক্ষিত সেবা পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে ওই এলাকার মৎস্যজীবীদের।
হালদার দ্বিতীয় প্রকল্পের ভবিষৎ নিয়ে প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজে গতি বাড়ানোর কাজ চলছে। হালদা বিশেষজ্ঞসহ অন্য অংশীজনদের সাথে বৈঠক করে প্রকল্প কাজের কিছু পরিবর্তন এনে বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, হালদার মাছ রক্ষা ও দূষণ চিহ্নিত করার কাজে স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্য থেকে ৪০ জন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে দুই উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানানো হয়েছে এসব কাজে উপযোগী ৮০ জন করে নামের তালিকা পাঠাতে। তালিকা আসার পর যাচাই বাছাই করে ৪০ জনকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি জানান, অকেজো থাকা হ্যাচারিগুলো মেরামত করা হবে। আরো তিনটি হ্যাচারি নতুন করে প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিভিন্ন মহল থেকে আসছে। আগের কর্মসূচিতে থাকা ৭ কোটি টাকায় বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ করার বিষয়ে বলেন, ওই কাজ বাদ দেওয়া হয়েছে। ওই টাকায় হালদাপাড়ের সর্তাঘাট ও মদুনাঘাটে মৎস্য বিভাগের দুটি অফিস করা যায় কিনা অংশীজনদের সাথে বৈঠকের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিষয়ে তিনি আশাবাদী।