চট্টগ্রাম কাস্টমসে ৬৯ কোটি টাকার সোলার পাওয়ারের নিলামে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৯ মে শেষ হওয়া নিলামে ক্যাটালগের নয় নম্বর লটে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ‘ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট ফর সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট’ নিলামে তোলে। অভিযোগ উঠেছে, নিলামে কেবল ৬০টি ৪০ ফুট কন্টেনারে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৯৯৬ কেজি পণ্য উল্লেখ করা হয়। অথচ গত ২৬ নভেম্বরের ইনভেন্ট্রি (গণনা) রিপোর্ট মতে, এসব কন্টেনারে প্রতি বঙে ৩১টি করে সোলার পাওয়া যায়। এভাবে ৯৬০ বঙ সোলার পাওয়ার ছিল। নিলামে তোলার সময় পণ্যের বিবরণ সঠিকভাবে না দেওয়ার কারণে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমস ৬৯ কোটি ৭২ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৫ টাকার মূল্যের সোলার পাওয়ার নিলামে তোলে। আমাদের একজন সমিতির সদস্য অভিযোগ করেছেন, ক্যাটালগে পণ্যের বর্ণনা সঠিক ছিল না। শুধুমাত্র কন্টেনার সংখ্যা ও কেজি উল্লেখ করেছে কাস্টমস। তাহলে একজন সাধারণ বিডার কিভাবে বুঝবেন, কত টাকা বিড করলে তার লাভ হবে। কেউ তো লোকসান দেওয়ার জন্য পণ্য কিনে না। এখানে ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থেকে এটি আমরা আশা করিনি। শুধুমাত্র এই লটে এটি ঘটেছে। কন্টেনারে কত বক্স, প্রতি বক্সে কয়টি করে সোলার পাওয়ার ছিল সব ইনভেন্ট্রি রিপোর্টে ছিল। এখানে ইনভেন্ট্রি রিপোর্ট অনুসরণ করা হয়নি। এছাড়া ৬৯ কোটি টাকা মূল্যের এসব পণ্য মাত্র ১১ কোটি টাকায় ঢাকার নবাবপুর রোডের ওয়ার্ল্ড পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে অনুমোদন দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। তাই আমরা এসব পণ্য পুনরায় নিলামে তোলা দাবি জানাচ্ছি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. সাকিব হোসেন আজাদীকে বলেন, নিলামের পরে আমাদের নিলাম কমিটি পণ্য অনুমোদনের জন্য সভা করে। এখন পর্যন্ত আমাদের সেই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে কিছু বিডারের অভিযোগ হচ্ছে, সোলার পাওয়ারের সঠিক বর্ণনা ক্যাটালগে উল্লেখ করা হয়নি। নিলামের এই ক্যাটালগ তো অনলাইনে অনেকদিন উন্মুক্ত ছিল না। নিলাম চলাকালীন কেউ আমাদের কাছে এই অভিযোগ তোলেনি। আমরা কন্টেনারের সংখ্যা ও কেজি উল্লেখ করেছি। আমাদের ভ্যালুয়েশন হয় কেজি হিসেবে। আগে অভিযোগ দিলে আমরা সংশোধন করতে পারতাম। এছাড়া কোনো বিডার যদি জানতে চান কন্টেনারের কী পরিমাণ ছিল সেটি জানা তো অসম্ভব ছিল না।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো চার্জ পায় না।