৬০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে নগরীর উচু এলাকায় পৌঁছানো হবে পানি

ওয়াসার ৩০০ কিমি সার্ভিস লাইন পুনঃস্থাপন প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৫ at ৪:২৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম ওয়াসার দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ ও পুরনো ৩০০ কিলোমিটার পাইপ নতুন করে পুনঃস্থাপন এবং ১ লাখ গ্রাহককে ডিজিটাল মিটারের আওতায় আনার লক্ষ্যে গৃহীত চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিডব্লিউএসআইপি) কনসালটেন্ট নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম মহানগরীর উচু এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ৬০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে বলে জানান চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

ওয়াসা সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশনের ১, , ১০, ১১, ১৮, ৩৭ থেকে ৪১ নম্বর এই ১০ ওয়ার্ডে পানির সংকট বেশি। শতাধিক এলাকায় নেই ওয়াসার সংযোগ। বাসিন্দারা গভীর নলকূপ, কেনা পানি, পুকুর ও জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল। এই ওয়ার্ডগুলোর অনেক এলাকায় ওয়াসার সংযোগ নেই। আবার অনেক ওয়ার্ড উচু এলাকায় হওয়াতে ওয়াসার পুরো পাইপ লাইনের কারণে পানির প্রেসার যায় না। যার কারণে এই ১০টি ওয়ার্ডসহ নগরীর অনেক এলাকায় ওয়াসার মাসের পর মাসবছরের পর বছর পানি পাওয়া যায় না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) এবং সরকার দেবে ৫৭৮ কোটি। এ প্রকল্পে চট্টগ্রাম ওয়াসা নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেবে ৭৪ কোটি টাকা। গ্রেস পিরিয়ডসহ ১২ বছরে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। গত ১০ মে চট্টগ্রাম ওয়াটার সাপ্লাাই ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (সিডব্লিউএসআইপি) এর আওতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সরকার ও আইডিএ’র মধ্যে ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণের একটি অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রকল্পটিকে গত ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন করা হবে। একইসঙ্গে অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। অপচয় রোধ, নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি। তিনি বলেন, মহানগরীর পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অঙিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা ও অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কনসালটেন্ট নিয়োগের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। বিদেশি কনসালটেন্ট নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। সব কিছু গুছিয়ে নেওয়া হচ্ছে, যাতে ডিসেম্বর নাগাদ টেন্ডার আহ্বানসহ মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু করা যায়।

তিনি বলেন, মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি হাইড্রোলিক জোনে বিভক্ত করা হয়েছে। জোনসমূহের মধ্যে একটি জোন কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়া (কেএসএ), যা শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত। কর্ণফুলী সার্ভিস এরিয়ায় জাইকা ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প২ এর অধীনে নগরীতে মোট ৮০০ কিলোমিটার পুরোনো পাইপ তুলে নতুন পাইপ বসানো (ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন লাইন) হয়েছিল। তাতে এই এলাকায় প্রায় ৪৬ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে সুষম চাপে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ওয়াসার ১০ শতাংশ সিস্টেম লস কমেছে।

অপর পাঁচটি জোনের মধ্যে পতেঙ্গা, খুলশী, এ কে খান, বায়েজিদ, অঙিজেন, কালুরঘাট, চাক্তাই এলাকার ৩০০ কিলোমিটার পুরাতন জরাজীর্ণ পাইপলাইন, লিকেজ, ম্যানুয়াল মিটারিং ব্যবস্থা, অবৈধ সংযোগের কারণে ৪০ হাজার সার্ভিস কানেকশনে নিরবচ্ছিন্ন ও সুষম চাপে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। উক্ত এলাকাসমূহে সুষম চাপে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ এবং পানির অপচয় রোধ করে রাজস্ব বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে উক্ত এলাকাসমূহে ৩০০ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন প্রতিস্থাপন, ১ লাখ অটোমেটেড স্মার্ট মিটারিংসহ ডিএমএ ব্যবস্থা প্রবর্তন করার লক্ষ্যে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেয়াং পাহাড়ে আবারও ফিরেছে হাতির দল
পরবর্তী নিবন্ধমোবাইল ছিনতাই করে পালানোর সময় গণপিটুনি দিয়ে হত্যা