আনোয়ারাতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে নগর পুলিশের ছয় কনস্টেবলকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গত রোববার তাদের গ্রেপ্তারের পর সন্ধ্যায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দের আদালতে হাজিরের পর অভিযুক্তদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন কনস্টেবল আব্দুল নবী, এসকান্দর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শাকিল খান, মো. মাসুদ এবং মোর্শেদ বিল্লাহ। এরা সবাই স্পেশাল আর্মড ফোর্স (এসএএফ) শাখায় কর্মরত রয়েছে। সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ছয়জনের মধ্যে মোর্শেদ বিল্লাহ সিএমপি কমিশনার সালেহ মো. তানভীরের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার পর দুইমাস আগে তাকে বদলি করে এসএএফ শাখায় পাঠানো হয়েছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) আমির জাফর আজাদীকে জানান, গ্রেপ্তারের পর ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিএমপির জনসংযোগ কর্মকর্তা ও নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ জানান, আনোয়ারায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তদন্তে ছয় পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করা হয়েছিল। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এডিসি আব্দুর রউফ বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর পুলিশের তদন্তে ঘটনার সাথে পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসে। পরে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এটার মাধ্যমে আমাদের বার্তা হচ্ছে, অপরাধী যেই হোক তার কোন ছাড় নেই।
জানা গেছে, ঘটনার শিকার ব্যক্তি মো. আব্দুল মান্নান আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব বৈরাগ গ্রামের বাসিন্দা। ডিবি পরিচয়ে ঘর থেকে তুলে নিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগে গত রোববার আনোয়ারা থানায় একটি মামলা দায়ের করে ওই ব্যবসায়ী। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে চারটি মোটর সাইকেলে করে আটজন লোক তাদের বাড়িতে যায়। ডিবি পরিচয়ে তাকে একটি মোটরসাইকেলে তুলে পটিয়া উপজেলার ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পূর্বপাশে কৈয়গ্রাম রাস্তার মাথায় একটি চা দোকানে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে আব্দুল মান্নানকে তারা জানায়, মান্নানের বিরুদ্ধে ডিবিতে অভিযোগ আছে। এর থেকে অব্যাহতি পেতে হলে তাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। রাতভর ‘দর কষাকষির’ পর ভোর ৫টার দিকে আত্মীয়ের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা এনে তাদের হাতে তুলে দেন মান্নান। এরপর তারা মান্নানকে সেখানে রেখে চলে যায়।
পুলিশকে মান্নান জানান, আটজনের মধ্যে একজনের গায়ে ‘ডিবি’ লেখা জ্যাকেট ছিল। পরস্পরের সঙ্গে আলোচনায় একজনকে তিনি মোরশেদ নামে ডাকতে শুনেছেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোববার আব্দুল মান্নান মামলা দায়েরের পর আনোয়ারা থানা পুলিশ নগরীতে অভিযান চালিয়ে ছয় কনস্টেবলকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। এ দিন বিষয়টি গোপন থাকলেও গতকাল পুলিশ গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে জানাজানি হয়।