ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর নিয়োগবিধি সংশোধন, ব্যবহারিক ক্লাসের প্রশিক্ষক পদের নাম ‘ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর’ না করাসহ ৬ দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে চট্টগ্রামের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম দুই নম্বর গেট এলাকায় ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি করেন তারা। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা কোর্সের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নানা বৈষম্যের কথা তুলে ধরে এর বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এর আগে ২০ মার্চ শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে নগরে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নগরের মুরাদপুর–বহদ্দারহাট ও জিইসিমুখী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। তীব্র যানজটের কারণে নগরবাসীকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পরে প্রায় তিন ঘণ্টা পর বিকাল তিনটার দিকে সড়ক থেকে সরে যান শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস, ট্রাক ও সিএনজি চালকদের বাগ্বিতণ্ডা হয়ে। এ সময় গাড়ি চালকেরা হর্ন বাজিয়ে হট্টগোল করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে মিছিল নিয়ে কোতোয়ালী এলাকায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের দিকে যান। যানজটের কারণে একে খান থেকে জিইসিমুখী রাস্তা পুরোটাই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া লালখান বাজার থেকে বহদ্দারহাট এলাকা পর্যন্ত যাত্রীরা এ যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এক সিএনজি চালক বলেন, দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সড়কে বসে আছি। আমাদের তো গাড়ি চালিয়ে খেতে হয়। উনারা আন্দোলন করুক। কিন্তু এভাবে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে কেন। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের যখন যেখানে বলার সেখানে দাবি তুলে ধরুক তারা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সিডিএ অ্যাভিনিউ সড়ক ও বায়েজিদ সড়ক অচল হয়ে পড়ে। সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে গাড়ি চালকরা সড়কের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেন। ছাত্রদের একটি পক্ষ তাদের বাধা দিতে গেলে সেখানে বাগ্বিতণ্ডা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টররা কারিগরি ব্যাকগ্রাউন্ডের নন। অধিকাংশই অষ্টম শ্রেণি কিংবা এসএসসি পাস, যাদের মূল দায়িত্ব ল্যাব সহকারী হিসেবে কাজ করা। তাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা প্রকৃত কারিগরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে অভিযোগ তাদের। ছাত্রদের ছয় দফা দাবিগুলো হলো, জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকতে হবে, ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরসহ সকল পদে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রদের জন্য সব বিভাগীয় শহরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অতি শিগগিরই স্থাপন করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর চাকরির আবেদন বাস্তবায়ন করতে হবে, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য প্রাইভেট সেক্টরে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ কোটা অনতিবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উত্তর জোনের উপ–কমিশনার (ডিসি) নেছার উদ্দিন আহমেদ বিকালে বলেন, শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে গেছে। তারপর আধা ঘণ্টার মধ্যে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আজ দেশব্যাপী রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা: ছয় দফা দাবিতে আজ সারাদেশে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ দাবিতে চট্টগ্রামেও আন্দোলন করবে বলে জানা গেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, আজ সকাল ১১টায় রেললাইন দখলে নিবে শিক্ষার্থীরা। এসময় ১১টা ৪৫ মিনিটে কঙবাজারগামী ট্রেন ব্লক করবে তারা। দুপুর ১টায় কার্যক্রম শেষ করে মডেল স্কুল হয়ে মিছিল নিয়ে টেকনিক্যাল মোড় পর্যন্ত গিয়ে কর্মসূচি শেষ করবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।