পটিয়ার কলেজ ছাত্র রিয়াদ শরীরে ৬টি গুলি নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস যাবত যন্ত্রণায় বসতঘরেই কাতরাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট নগরীর বহদ্দারহাটে ছাত্র–জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয় রিয়াদ। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের বাইরে নিতে পারছে না পরিবার।
মাথা, চোখ, নাক ও মুখে ৬টি ছররা গুলি নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে মারাত্মক শারীরিক যন্ত্রণা নিয়ে ঘরেই কাতরাতে হচ্ছে মেধাবী ছাত্র রিয়াদকে। পটিয়ার কুসুমপুরা ইউনিয়নের হরিণ খাইন গ্রামের মেধাবী এ ছাত্রের জীবন প্রদ্বীপ যেন ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। চোখে লাগা গুলির যন্ত্রণায় দিন দিন চোখটি নষ্ট হয়ে চোখের আলো হারাতে বসেছে সে। অন্যদিকে মাথা, নাক ও মুখে বিদ্ধ গুলির যন্ত্রণায় তার প্রতিদিনের জীবনযাপন যেন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। অনার্স ৪র্থ বর্ষের ছাত্র ইমরানুল হক রিয়াদ নগরীর বাকলিয়া নোমান কলেজের ছাত্র।
৫ আগস্ট বহদ্দারহাটে তার শরীরে সর্বমোট ৩৯টি গুলি লাগে। এর মধ্যে প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ৩৩টি গুলি শরীর থেকে বের করা হলেও মাথা, চোখ, নাক ও মুখে এখনো ৬টি গুলি রয়ে গেছে। শারীরিক যন্ত্রণায় প্রতিটি ক্ষণ তার জন্য হয়ে উঠেছে এক একটি যন্ত্রণার দিন। তার শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে সবকিছু যেন নিভু নিভু অবস্থায়। শরীরে থাকা গুলির কারণে প্রতি মুহুর্তে মাথা, চোখ, নাক ও মুখের ব্যথার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রিয়াদ। এ ব্যথার কারণে প্রতিদিন বমি, চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়া, মাথা ব্যথাসহ শরীরে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া।
চিকিৎসকরা জানান, রিয়াদের স্পর্শকাতর জায়গায় গুলি থেকে যাওয়ায় তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। দ্রুত এ চিকিৎসা করাতে না পারলে তার জীবন দিন দিন ঝুঁকি হয়ে উঠবে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য এ মুহুর্তে ৮–১০ লাখ টাকার প্রয়োজন।
কিন্তু প্রবাসী পিতার পক্ষে এ পরিমাণ টাকা খরচ করা কোনভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। রিয়াদ জানান, আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সায়িদের মৃত্যুতে উজ্জীবিত হয়ে গত ৪ ও ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমের মাধ্যমে তার চিকিৎসায় মাত্র ৩০ হাজার টাকা পায় তারা।
তিনি বলেন, আমি পড়তে চাই, সুন্দর ও সুস্থভাবে বাঁচতে চাই। আমার চিকিৎসার জন্য সরকারি–বেসরকারিভাবে সবাইকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই।
রিয়াদের মা শাহনাজ বেগম বলেন, রিয়াদ আমার বড় ছেলে। তার শরীরে থাকা ৬টি গুলির যন্ত্রণায় সে ঠিকমত ঘুমাতে পারে না। পারে না খেতে, পড়তে কিংবা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে। আমার ছেলের জীবন বাঁচাতে সুচিকিৎসার জন্য সুস্থতার জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।
রিয়াদের চাচা রবিউল আলী বাদশা জানান, রিয়াদের উন্নত চিকিৎসা যতই বিলম্বিত হচ্ছে ততই তার জীবন দুর্বিষহ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও প্রশাসনসহ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে তার উন্নত চিকিৎসায় এগিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ রইল। তার পরিবার অর্থাভাবে তার উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছে না।