৫০ বছরে এই প্রথম চাঁদের নমুনা ধার এল যুক্তরাজ্যে

| রবিবার , ১১ মে, ২০২৫ at ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ

৫০ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে আনা চাঁদের পাথরের নমুনা প্রথমবার যুক্তরাজ্যে এসেছে, যেটি ধার দিয়েছে চীন। অতি ক্ষুদ্র আকারের এসব ধূলিকণা এখন ইংল্যান্ডের মিলটন কেইন্স শহরের এক ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে সুরক্ষিত অবস্থায় রাখা আছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি। খবর বিডিনিউজের।

দুষ্প্রাপ্য উপাদানটি ধার হিসেবে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী প্রফেসর মাহেশ আনন্দ। এটিকে সোনার ধূলির চেয়েও দামী বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। প্রফেসর আনন্দ বলেছেন, এর আগে চীনের এসব নমুনায় বিশ্বের কারোরই প্রবেশাধিকার ছিল না। তাই এটি এক বিরাট সম্মান ও সৌভাগ্যের বিষয়।

এসব ধূলিকণাকে পিষে ও লেজার দিয়ে বিশ্লেষণ করে চাঁদের গঠনের পেছনের মৌলিক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চাইছে প্রফেসর আনন্দের গবেষণা দলটি এবং এর মাধ্যমে পৃথিবীর প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কেও তারা জানবেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

চাঁদের এ ধূলিকণার ভেতরে এমন প্রমাণ থাকতে পারে, যা বিজ্ঞানীদের একটি বিশেষ তত্ত্বের সত্যতা জানতে ও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এ তত্ত্ব বলছে, সাড়ে চারশ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সঙ্গে মঙ্গল গ্রহের আকারের এক গ্রহের সংঘর্ষে ছিটকে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয়েছিল চাঁদ।

২০২০ সালে নিজেদের PvO’ই৫ মহাকাশ মিশনের সময় চাঁদের এসব পাথর সংগ্রহ করেছিল চীন। ওই সময় চাঁদের মন্স রুমকার নামের এক আগ্নেয়গিরিময় অঞ্চলে অবতরণ করেছিল মহাকাশযানটি।

চাঁদের মাটি খুঁড়ে প্রায় ২ কেজি নমুনা সংগ্রহ করে মহাকাশযানটির এক রোবটিক হাত, যা একটি ক্যাপসুলে করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয়। চীনের মঙ্গোলিয়া অঞ্চলে অবতরণ করেছিল ক্যাপসুলটি।

১৯৭৬ সালের সোভিয়েত মিশনের পর চাঁদ থেকে সফলভাবে নমুনা আনার অভিযান এটিই প্রথম, যা চীনকে নতুন মহাকাশ প্রতিযোগিতায় প্রথম সারিতে নিয়ে গিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।

এখন, মহাকাশবিজ্ঞানীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ধারাবাহিকতায় প্রথমবারের মতো সাতজন আন্তর্জাতিক গবেষককে চাঁদের ওই নমুনা গবেষণার জন্য দিয়েছে চীন, যাতে নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন তারা।

গত সপ্তাহে চীনের বেইজিংয়ে আয়োজিত এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে এসব ক্ষুদ্র কাঁচের শিশি প্রফেসর আনন্দের হাতে তুলে দিয়েছেন চীনের গবেষকরা। এ অনুষ্ঠানে রাশিয়া, জাপান, পাকিস্তান ও ইউরোপের সহকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেছেন আনন্দ।

তিনি বলেছেন, এটা যেন একেবারে অন্য এক দুনিয়ার অভিজ্ঞতা ছিল। আর মহাকাশ কর্মসূচিতে বিনিয়োগের দিক থেকে আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে চীন।

যুক্তরাজ্যে এ অমূল্য জিনিসটি নিয়ে ফিরে আসেন আনন্দ। এরপর মিলটন কেইন্স শহরের ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারে উচ্চ নিরাপত্তা সম্পন্ন কক্ষের পরিবেশে একেবারে ধুলাবালিমুক্ত অবস্থায় চাঁদের ধুলিকণার শিশি রেখেছেন তিনি, যাতে করে এতে কোনও রকম দূষণ না ঘটে।

পৃথিবীর উপাদানের সঙ্গে যদি এই মহাজাগতিক ধূলিকণা মিশে যায় তাহলে প্রফেসর আনন্দের গবেষণা দলটির এ নিয়ে বিশ্লেষণ চিরতরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চাঁদের ধুলো দেখতে খুব সাধারণ লাগলেও, এর মহাজাগতিক যাত্রাপথের কথা ভাবলে আবেগে মাথা নত হয়ে আসে। প্রফেসর আনন্দ বলেছেন, তাদের এর চেয়ে বেশি পরিমাণ চাঁদের ধূলিকণার দরকার নেই, সব মিলিয়ে এই ৬০ মিলিগ্রামই যথেষ্ট। তিনি বলেছেন, এতো কম পরিমাণই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এইটুকুই আমাদের আগামী অনেক বছর ব্যস্ত রাখবে, কারণ আমরা ক্ষুদ্র উপাদান নিয়েই দীর্ঘদিনে ধরে গবেষণা করায় পারদর্শী।

এ শিশি খোলার পর চাঁদের ধূলিকণার ওপর সরাসরি কাজ করবেন ওপেন ইউনিভার্সিটির গবেষণাগারের টেকনিশিয়ান কাই নাইট। তিনি গত ৩৬ বছর ধরে পাথরের টুকরা কাটা ও ঘষার কাজ করছেন। তবে এই প্রথমবারের মতো এমন কিছুতে কাজ করবেন তিনি যা সরাসরি চাঁদের মাটি থেকে আনা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, আমি দারুণ রোমাঞ্চিত। কিন্তু নার্ভাসও লাগছে। কারণ এসব নমুনা খুব বেশি নয়। এগুলো নতুন করে এভাবে সহজে আনাও সম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি অনেক। তিনি এসব নমুনা প্রস্তুত করার পর সেগুলো যাবে আরও দুটি পরীক্ষাগারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি হলেও স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানিচুক্তি
পরবর্তী নিবন্ধনিজের মোট সম্পদের ৯৯ শতাংশই দান করবেন গেটস