চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দামের অন্তত ৪ কেজি কোকেনসহ স্টিলা সান্তাই নামে বাহামার এক নারীকে আটক করা হয়েছে। আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী ওই নারী ব্রাজিল থেকে দুবাই হয়ে গত ১৩ জুলাই বাংলাদেশে আসেন। দুদিন আগে দেশে প্রবেশ করলেও তিনি গতকাল ব্যাগেজ রুলসে আসা তার একটি লাগেজ আনতে গিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কোকেনসহ ধরা পড়েন। রাতে শেষ খবরে জানা গেছে যে, উক্ত নারী বাংলাদেশে কার কাছে এসেছিলেন, কাদের সাথে যোগাযোগ বা কাদের জন্য তিনি কোকেনের চালানটি নিয়ে এসেছিলেন তা নিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।
বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, বাহামার নাগরিক ওই নারী গত ১২ জুলাই এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ব্রাজিলের সাওপাওলো থেকে রওনা দিয়ে দুবাই পৌঁছান। ওখান থেকে ট্রানজিট ফ্লাই দুবাইয়ের একটি ফ্লাইটে গত ১৩ জুলাই শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু ওই দিন তার ব্যাগেজ না আসায় তিনি চট্টগ্রামের একটি হোটেলে অবস্থান করেন। গতকাল সোমবার সকালে তিনি বিমানবন্দর থেকে তার লাগেজ নিয়ে বের হওয়ার আগ দিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে চ্যালেঞ্জ করে। পরে তার লাগেজে তল্লাশি চালিয়ে লাগেজে থাকা ইউপিএস এর ভেতরে বিশেষ কায়দায় লুকোনো অবস্থায় ৩ কেজি ৯০০ গ্রাম কোকেন উদ্ধার করে। এ কোকেন ভালোভাবে মুড়িয়ে তার ওপর তামার তার দিয়ে কয়েলের আকৃতি দেয়া হয়। যাতে প্রথম দেখায় মনে হয় ইউপিএস এর ভিতরের যন্ত্র। অভিযানকারী দলের সদস্যরা উক্ত তারের আবরণের ভিতর থেকে কোকেনের চালানটি উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত কোকেনের বাজারমূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বলে বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তসলিম আহমেদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ওই যাত্রী দুইদিন আগে আসেন। তখন তার সাথে কোনো লাগেজ ছিল না। শুরু থেকে তাকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছিল। তিনি এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি, এপিবিএন ও ইন্টেলিজেন্স এর নজরদারিতে ছিলেন।
বিমানবন্দরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লাগেজ নেয়ার জন্য বিমানবন্দরে আসলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা তার লাগেজে থাকা একটি ইউপিএস এর ভিতরে থেকে কোকেনের চালানটি উদ্ধার করেন। ওই সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিমানবন্দর সিকিউরিটি ও ইন্টেলিজেন্সের সদস্যরাও অভিযানে অংশ নেন বলেও ওই কর্মকর্তা জানান।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বাহামার ওই নারী আগে থেকেই নজরদারিতে ছিল। তার ব্যাপারে অভিযান চালানোর জন্য ঢাকা থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। তারাও অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
কোকেন উদ্ধারের পর তাকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কমর্কতারা। এদের সাথে গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমও যোগ দেয়। ওই নারী কোকেন নিয়ে চট্টগ্রামে কার কাছে এসেছিলেন, কাদের সাথে তার যোগাযোগ আছে ইত্যাদি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং অভিযান চালানো হচ্ছে বলে রাতে শেষ খবরে জানা গেছে। তবে গতকাল দুপুরের পর থেকে শুরু হওয়া অভিযানে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে কিনা তা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা পুলিশ জানায়নি। অভিযান যাতে ব্যর্থ না হয় সেজন্য কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গতরাতে দৈনিক আজাদীকে জানান, বিমানবন্দরে কোকেন আটক হয়েছে। তবে ওই নারী কিংবা কোকেন এখনো থানায় জমা দেয়া হয়নি। ওই নারীকে নিয়ে সম্ভবত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে স্বীকার করেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে একটি মামলা রুজু হবে।