মহেশখালীর সোনাদিয়া হয়ে নৌপথে মুন্সিগঞ্জে যাওয়া মাদকের বড় একটি চালান জব্দ করেছে র্যাব। সেই সাথে চোরাচালানি চক্রের ৫ সদস্যকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (৩২), মকসুদ মিয়া (২৯), মো. রিয়াজ উদ্দিন (২৩), শাহিন আলম (২৮) ও শামসুল আলম (৩৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১২ কেজি আইস, ১ লাখ পিস ইয়াবা, দুটি বিদেশি পিস্তল, ৪ হাজার ৬২০ পিস চেতনানাশক সিডাকটিভ ইনজেকশন, ১ লাখ বার্মিজ মুদ্রা ও পাঁচটি মোবাইল ফোন। জব্দ করা ১২ কেজি আইসের মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি।
জানা গেছে, ‘আইস সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতম হোতা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন সোনাদিয়া দ্বীপ এলাকার একজন লবণ ব্যবসায়ী। লবণ ব্যবসার আড়ালে মিয়ানমার থেকে আইস এবং ইয়াবা চালান নিয়ে এসেছেন। গত পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে জসিম উদ্দিন ইয়াবা পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত একবছর ধরে আইস ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও এ সময় বেশ কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এই চক্রের আরও ১২-১৫ জন সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
র্যাব সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। তিনি নৌপথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানব পাচার ও মারামারি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অপর সদস্য শামছুল আলমের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে। শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন। গ্রেপ্তার রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারির জন্য স্কর্ট বোটে অবস্থান করে স্কর্টিংয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
র্যাব জানায়, এরা মূলত সোনাদিয়া-কেন্দ্রিক মাদক চোরাকারবারী চক্র। মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা মাদক ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা নৌপথে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশালসহ দেশের অভ্যন্তরে তারা সরবরাহ করে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা এ চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগরপথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থলে পৌঁছানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা ২০-২৫ দিন জেলে ছদ্মবেশ নিয়ে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করে থাকে। মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে। বহন করা ইয়াবা ও আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে চক্রটি সোনাদিয়া থেকে দুটি বোটের মাধ্যমে নোয়াখালীর হাতিয়ায় ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবার চালান পাচার করে।
র্যাব আরও জানায়, এ ভাবে বহন করা মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছালে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে মাদকের চালান সংরক্ষণ করতো। পরে পুনরায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় মেঘনা নদী হয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া/ঢাকার আশপাশে অথবা সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছে দেয়।
উল্লেখ্য, নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইনশৃক্সখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য চক্রটি ২টি বোট ব্যবহার করে থাকে। সামনের বোটটিকে নজরদারির কাজে ব্যবহার করা হয় এবং পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হয়। মোবাইল অথবা টর্চ লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। পথে নজরদারিতে নিয়োজিত স্কর্ট বোট আইনশৃক্সখলা বাহিনীর টহল আঁচ করতে পারলে পেছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত দিত পালিয়ে যেতে।