লাইটারেজ জাহাজের সাবেক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটি ৫ মাস পরও কাজ শুরু করতে পারেনি। কমিটির সদস্যদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকারও অভিযোগ রয়েছে। ডব্লিউটিসি কিংবা পরবর্তীতে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে দেশের সাধারণ জাহাজ মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেক জাহাজ মালিকের দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সেক্টরটিকে রক্ষা এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে দুর্নীতির বিষয়ে দ্রুত তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রে জানা যায়, দেশের লাইটারেজ জাহাজের নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল ডব্লিউটিসি। সংস্থার দায়িত্বে থাকা লোকজন কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন-এমন একটি অভিযোগ আগে থেকে করা হচ্ছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর যারা ডব্লিউটিসি পরিচালনা করতেন তাদের কেউ কেউ গা ঢাকা দেন, কেউ পদত্যাগ করেন। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তরা সংস্থার নাম পরিবর্তন করে গঠন করেন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন সেল (বিডব্লিউটিসিসি)। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ডব্লিউটিসির দুর্নীতি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। বলা হয়েছিল, তদন্ত কমিটি দুর্নীতির অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যাতে দেশের সাধারণ জাহাজ মালিকরা উপকৃত হন এবং ভবিষ্যতে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে না পড়েন তার ব্যবস্থা করা হবে।
১৮ নভেম্বর নতুন সংস্থার প্রথম নীতিনির্ধারণী বৈঠকে দুর্নীতি তদন্তে গঠিত কমিটিতে ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চিটাগাং বা আইভোয়াকের সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে কমিটির আকার বড় হয়।
কোয়াবের চেয়ারম্যান এবং বিসিভোয়ার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবিরকে প্রধান করে গঠন করা কমিটিতে কোয়াব সদস্য এম এ বকর এবং মোহাম্মদ সোহাগ, বিসিভোয়ার সদস্য মোহাম্মদ মাসুদ করিম, মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন লিমন, মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী আকন্দ এবং আইভোয়াকের সদস্য হিসেবে প্রদীপ চক্রবর্তী ও ফয়েজ আহমদকে নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিডব্লিউটিসিসির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিএম খানকে করা হয় কমিটির সদস্য সচিব। কিন্তু এই কমিটি কোনো কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
সাধারণ জাহাজ মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহন সেক্টরে দুর্নীতি তদন্তের পরিবর্তে ধামাচাপা দেওয়ার তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ৫ মাস আগে কমিটি গঠন করা হলেও কমিটি কোনো কাজ করেনি। দুর্নীতিবাজেরা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। গঠিত তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য নিজেদের মধ্যে একবার একটি বৈঠক করেছিলেন। এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। ডব্লিউটিসির দুর্নীতি তদন্তে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই কমিটির অনেকেই বিভিন্ন মেয়াদে ডব্লিউটিসি পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন। এতে করে দুর্নীতির পুরো ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
একাধিক জাহাজ মালিক বলেছেন, ডব্লিউটিসি যদিও একটি বেসরকারি সংগঠন, এর সাথে জড়িত দেশের অভ্যন্তরীণ পণ্য সরবরাহ নেটওয়ার্কসহ সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনা। তাই এই খাতকে গুরুত্ব দিয়ে দুর্নীতির মুলোৎপাঠন করা উচিত।
এ বিষয়ে কথা বলতে কমিটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবিরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। কমিটির সদস্য সচিব, বিডব্লিউটিসিসির নির্বাহী পরিচালক মেজর (অব.) জিএম খান এই ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।