৫ নভেম্বর জনসমাবেশের মাধ্যমে শেষ হচ্ছে সিআরবি আন্দোলন

আজাদী সম্পাদকের সাথে নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২২ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

‘সিআরবি বাঁচুক, হাসপাতাল হোক অন্যত্র’। সিআরবি সিআরবিই থাকবে। সিআরবিকে আমাদের থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগের বিরোধিতা করে আসছেন চট্টগ্রামের আপামর জনসাধারণ। তাদের প্রতিনিধি হয়ে নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের নেতা কর্মীরা গতকাল একটানা ৪৭০ দিনের মতো আন্দোলন করে চলেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর এ আন্দোলন স্থগিত করতে চলেছে নাগরিক সমাজ বিশাল জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে। সিআরবি রক্ষার এ আন্দোলনকে বেগবান করার পেছনে মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদী। আজাদীসহ চট্টগ্রামের পাঁচ পত্রিকা সিআরবি রক্ষার এ আন্দোলনকে প্রতিদিন কাভারেজ দিয়ে গেছেন এবং এর মাধ্যমে তারা জানিয়ে দিয়েছেন প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থান। গতকাল রাতে দৈনিক আজাদী সম্পাদক একুশে পদক প্রাপ্ত সংবাদ ব্যক্তিত্ব এম এ মালেকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় সভা করতে আসেন নাগরিক সমাজ নেতৃবৃন্দ।

সভায় দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, চট্টগ্রামের যেকোন ভালো কিছুর সাথে আজাদী সবসময় ছিল, আগামীতেও থাকবে। কারণ আজাদী চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের মুখপত্র। সিআরবি রক্ষার আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে আজাদী সবসময় ছিল। আজ সিআরবি দখলমুক্ত হতে যাচ্ছে। এখানে কারও কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। সিআরবি রক্ষা পেলে চট্টগ্রামের মানুষ উপকৃত হবেন। এজন্যই আমরা পাশে ছিলাম।

তিনি নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দকে বলেন, আগামীতেও চট্টগ্রামের যেকোন সংকট, যেমন খেলার মাঠ সমস্যা, পুকুর ভরাট, পাহাড় কাটাসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে নাগরিক সমাজের ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। আমার বিশ্বাস, সিআরবি রক্ষার মতো, তারা সেসব সমস্যা মোকাবেলায়ও সফল হবেন এবং আজাদী সবসময় তাদের পাশে থাকবে।

নাগরিক সমাজ, চট্টগ্রামের সদস্যসচিব এডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বলেন, শতবর্ষী বৃক্ষসমৃদ্ধ পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এলাকাটি জনসমাগমের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ইট-পাথরের শহরে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা সিআরবিকে এক টুকরো অঙিজেন প্ল্যান্ট বলা চলে। হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আবদুর রবের কবর, যিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। মুক্তিযুদ্ধে এই সিআরবিতে অনেকে শহীদ হয়েছেন। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। সেই সব স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে।

২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বাংলাদেশ গেজেটভুক্ত প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-চউক প্রণিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান এ সিআরবিকে কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সিআরবি প্রোটেকটেড এরিয়া হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। সেই হিসেবে সিআরবিতে কর্মাশিয়াল ব্যবহারের জন্য অনুমতি দেয়া যাবে না। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান এ এটি সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে, চউক, সিটি কর্পোরেশনসহ সেবাদানকারী সংস্থাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সিআরবিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ সংবিধান পরিপন্থি কাজের শামিল। চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন, পাহাড় ধ্বংস করে বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চিরসবুজ সিআরবিতে শুধু হাসপাতাল নয়, কোনো ধরনের স্থাপনা করা সমীচীন হবে না। প্রকৃতি ও পরিবেশ বিনাশী সব কর্মকান্ডই হবে আত্মবিধ্বংসী।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কো-চেয়ারম্যান ডা. মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউনুচ, মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, স্বপন মজুমদার, সাবেক ছাত্রনেতা মো. শাহজাহান চৌধুরী, আইনজীবী নেতা এডভোকেট জিয়াউদ্দিন, কবি অধ্যাপক মিনু মিত্র, নেছার আহমেদ খান, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার টুনু, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম মুন্না, তাপস দে, দিলরুবা খানম প্রমুখ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআইআইইউসি’র ২৫ বছর পূর্তি উৎসব আজ
পরবর্তী নিবন্ধ২০০ ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের হুন্ডি বাণিজ্য