চট্টগ্রামের ১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৫ আসনে চমক হিসেবে নতুন পাঁচ প্রার্থী পেলেন নৌকার মনোনয়ন। বাকি ১১টিতে পুরনোরাই বহাল আছেন। অর্থাৎ বর্তমান ১১ সংসদ সদস্যের পাশাপাশি পাঁচ আসনে এসেছেন নতুন মুখ। এদিকে চট্টগ্রামে দুই আসনে বাদ পড়েছেন দুজন এমপি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ঘিরে ছিল নানা জল্পনা। কারা পাচ্ছেন নৌকার টিকেট, এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং তাদের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা–সমালোচনার পাশাপাশি ছিল উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা। বিশেষ করে চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের বিপরীতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী ২১৮ জনের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি হেভিওয়েট প্রার্থীদেরও ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থা হয়। শেষ পর্যন্ত গতকাল রোববার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সারা দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৮ আসনে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
৫ আসনে নতুন মুখ : চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে ৫টি আসনে নতুন করে দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আগের প্রার্থী পরির্বতন করে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে তিন আসনে। আসনগুলো হলো চট্টগ্রাম–১ মীরসরাই, চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম–১২ পটিয়া। চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি এবং চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। ওই দুটি আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার ওই দুই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া হলো।
চট্টগ্রাম–১ মীরসরাই আসনে সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেল এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
চট্টগ্রাম–২ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য খাদিজাতুল আনোয়ার সনি। চট্টগ্রাম–৪ সীতাকুণ্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আবুল কাশেম মাস্টারের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান (সদ্য পদত্যাগ করা) এস এম আল মামুন।
চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সালাম। চট্টগ্রাম–১২ (পটিয়া) আসনে এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী।
১১ আসনে যারা আছেন : চট্টগ্রাম–৩ সন্দ্বীপ আসন থেকে আবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান। চট্টগ্রাম–৬ রাউজান আসন থেকে এবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম–৭ রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ।
চট্টগ্রাম–৮ (বোয়ালখালী–চান্দগাঁও) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নোমান আল মাহমুদ। চট্টগ্রাম–৯ কোতোয়ালী আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
চট্টগ্রাম–১০ (ডবলমুরিং–খুলশী) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু। চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ। চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।
চট্টগ্রাম–১৪ (চন্দনাইশ–সাতকানিয়া আংশিক) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী। চট্টগ্রাম–১৫ (লোহাগাড়া–সাতকানিয়া আংশিক) আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। এছাড়া চট্টগ্রাম–১৬ বাঁশখালী আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।