চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী ফেল করেছে। গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে প্রায় ৪০ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী ফেল করেছে। পাশ করেছে এক লাখের কিছু বেশি। পরীক্ষার এই ফলাফল গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বলে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবার ১ হাজার ১৬৪টি স্কুল থেকে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এদের মধ্যে ১ লাখ ১ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন গ্রেডে পাশ করে। ফেল করে ৩৯ হাজার ২০৭ জন পরীক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এটাকে বেশি আশংকাজনক বলে মন্তব্য করে সূত্রগুলো বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই সংখ্যা সর্বাধিক। গত কয়েক বছরে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেনি। গতবছর অকৃতকার্য হয়েছিল ২৪ হাজার ৯৩৫ জন। ২০২৩ সালে ছিল ৩৩ হাজার ১৫২ জন, ২০২২ সালে অকৃতকার্য হয়েছিল ১৮ হাজার ৪৭০ জন এবং ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৪৬ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ২০২৫ সালের প্রকাশিত এসএসসির ফলাফল বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
এবারের এক বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীর সংখ্যাও গতবছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। এ বছর এক বিষয়ে ২৪ হাজার ৬৬৮ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে। যা গতবছর ছিল ১৭ হাজার ৭৭০ জন। ২০২৩ সালে ২২ হাজার ৩৯৬ জন, ২০২১ সালে ১৪ হাজার ১৯৪ জন এবং ২০২১ সালে ১২ হাজার ৯৫৬ জন শিক্ষার্থী এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। এক বিষয়ে ফেলের হার এবার ১৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যা আগের বছর ছিল ১২.২৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে ছিল ১৪.৬০ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৯.০৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ছিল ৮.০৪ শতাংশ।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারেও ধস নেমেছে। এ বছর ৭২ দশমিক ০৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গতবছর ছিল ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। যেটি ২০২৩ সালে ছিল ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, ২০২২ সালে ছিল ৮৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এবছর ছাত্রী পাসের হার ছিল ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ। যা গত চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। একইভাবে ছাত্র পাসের হারেও বিপর্যয় ঘটেছে। এবছর ছাত্র পাসের হার ৭১ দশমিক ৯৩ শতাংশ। যা গত চার বছরের মধ্যে সব চেয়ে কম।
বেশি শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, জুলাই আগস্টের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কিছুটা ব্যাহত হয়। আবার এবার খাতা মনিটরিং করার ক্ষেত্রেও কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটির প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তাই রেজাল্টে অকৃতকার্যের সংখ্যা আগের বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন যাতে আমরা শিক্ষা ব্যবস্থার সঠিক চিত্রটা তুলে আনি। আমরা এবার সে কাজটিই করেছি। খাতা খুব গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করা হয়েছে। যাতে কোনো ত্রুটি–বিচ্যুতি না থাকে। বিষয়গুলো খুবই যত্নের সাথে করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার মানের সাথে কোনোভাবেই কম্প্রমাইজ করা উচিত নয়। আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নের চেষ্টা করছি।
চট্টগ্রামের একাধিক শিক্ষক বলেছেন, এবার খাতা কাটার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কোনোভাবেই ওভারমার্কিং যাতে না হয় সেদিকে সজাগ থাকার নির্দেশনা ছিল। অন্যান্য বছরগুলোতে ওভারমার্কিং হতো বলে মন্তব্য করে তারা বলেন, এতে বহু শিক্ষার্থী ২০–২২ পেয়েও ওভার মার্কিংয়ের কারণে পাশ করে যেতো। এবার যা করা হয়নি।
অবশ্য ওই শিক্ষকেরা বলেন, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় আরো অনেক বেশি মনযোগী হতে হবে।