১৯৮০’র দশকে নির্মিত হয়েছে খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক ও জেলা মহাসড়ক। পাহাড় কেটে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে তাড়াহুড়ো করে এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এক সময় পাহাড়ি এলাকায় জনসংখ্যা কম থাকায় যান চলাচলও কম ছিল। তবে পর্যটনসহ পাহাড়ে কৃষি ও বনজ দ্রব্য পরিবহনের কারণে পাহাড়ি সড়কে যান চলাচল বেড়ে যায়। ব্যস্ত হয়ে উঠে পাহাড়ি সড়ক। বাড়েনি সড়কের প্রশস্ততা, কমেনি বাঁক। অতি ঝূঁকিপুর্ণ বাঁকই ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ। এসব বাঁক যেন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন সড়কে অন্তত ২০টি মালবোঝাই ও যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে যায়। বাঁকের কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে। খাগড়াছড়ি সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়,‘ খাগড়াছড়ির অধিকাংশ সড়ক নির্মিত হয়েছে ১৯৮০’র দশকে । সে সময় অনেকটা অপরিকল্পিত ও তাড়াহুড়ো করে পাহাড় কেটে এসব সড়ক নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়ক হয় সরু এবং অতিরিক্ত বাঁক সম্পন্ন । পাহাড়ি সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে যানবাহন চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠেছে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা-মাটিরাঙা সড়ক, খাগড়াছড়ি -দীঘিনালা সড়ক, খাগড়াছড়ি-বাঘাইছড়ি সড়ক, খাগড়াছড়ি-রামগড় সড়ক, খাগড়াছড়ি-তাইন্দং সড়কে সবচেয়ে বেশি বাঁক রয়েছে। মাটিরাঙা থেকে আলুটিলা হয়ে খাগড়াছড়ির জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ছোট বড় বাঁকের সংখ্যা ১০০টি। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই ঝুঁকিপুর্ণ। সবচেয়ে বেশি বাঁক খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা জেলা মহাসড়কে।
প্রায় ২০ কি.মি. এ সড়কে বাঁকের সংখ্যা ১০৮টি। এটি জেলার সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক হিসেবে বিবেচিত। এ সড়কে দীঘিনালা ছাড়াও পর্যটন কেন্দ্র সাজেক,বাঘাইছড়ি ও লংগদুগামী যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন গড়ে শতাধিক বাঁশ ও কাঠ বোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে। নিয়ম অনুযায়ী জেলা মহাসড়কের প্রশস্ততা হবে ১৮ ফুট। কিন্ত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলার সাথে সংযোগকারী জেলা মহাসড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট।
এসব সড়কে একসাথে দুটো ট্রাক বা যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতে পারে না। বিপরীত দিক থেকে আসা ভারী যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। সরু সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সিএনজি,মাহেন্দ্র ,মোটরসাইকেল,জীপসহ অন্যান্য ছোট পরিবহন চলাচলে সমস্যা হয়। অনেক সময় মুখোমুখি সংঘর্ষও ঘটে। খাগড়াছড়ি থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামে নিয়মিত বাঁশ পরিবহন করে চালক শাহিন আলম । তিনি বলেন,‘ আমি এখানকার স্থানীয় চালক। আমরা নিয়মিত বাঁশ পরিবহন করি। বাঁশ বোঝাই করে এসব সড়কে চলতে গেলে বিপরীত দিক থেকে কোন গাড়ি আসলে ক্রস করা যায় না। রাস্তাটি আরো বড় করলে আমাদের চলাচলে সুবিধা হবে।
ট্রাক চালক আব্দুল্লাহ আল ইব্রাহীম ও নয়ন জানান , এ সড়কে আমাদের সামনেই অনেক গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। প্রতিমাসে গড়ে ১০ থেকে ২০টি গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে। কেবল বাঁকের কারণে এসব গাড়ি উল্টে যায়। আমার অনেক ঝুঁকি নিয়েই্ এই রাস্তায় গাড়ি চালাই।’ সিএনজি অটোরিকশা চালক মো ইলিয়াস ও সুজন বলেন ‘ খাগড়াছড়ি -দীঘিনালা রাস্তা ছোট এবং টার্নিং বেশি। এছাড়া সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে প্রচুর গাড়ি যাতায়াতের কারণে যানবাহনের চাপ বেশি । রাস্তা চিকন হওয়ার কারণে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ি দেখা যায় না। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। রাস্তাটা চওড়া করলে আমরা দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে পারব। ’
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান খোকন বলেন, পাহাড়ি সড়কগুলো বড় করলে দুর্ঘটনা কমবে।
সড়ক প্রশস্ত করণ ও বাঁক সরলীকরণে ট্রপোগ্রাফিক সার্ভে করছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ । আঞ্চলিক মহাসড়ক ২৪ ফুট প্রশস্ত হওয়ার নিয়ম থাকলেও খাগড়াছড়ির আঞ্চলিক সড়কের প্রশস্ততা ১৮ ফুট । পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের। এদিকে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্তকরণ ও বাঁক সরলীকরণে কাজ চলমান আছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। খাগড়াছড়ি সড়ক ও জপনদ বিভাগরে নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, পাহাড়ি সড়কগুলো প্রশস্ত করা এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে আমরা ট্রপোগ্রাফিক সার্ভের কাজ শুরু করেছি। সার্ভারের কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্প প্রস্তুত করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে পাহাড়ের পরিবেশগত প্রভাব নিরুপণ করে আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো ২৪ ফুট প্রশস্ত করা হবে এবং জেলা মহাসড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে।