৩০ টাকায় খান এক খিলি ‘আগুন পান’

মহেশখালীর মিষ্টি পানকে নানা মসলায় সাজিয়ে আগুন ধরিয়ে মুখে দেওয়ার দৃশ্য দেখতে পর্যটকদের ভিড়

ফরিদুল আলম দেওয়ান, মহেশখালী | বৃহস্পতিবার , ২ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের ৬নং জেটি ঘাট থেকে সি ট্রাক কিংবা স্পিডবোটে চড়ে মহেশখালী জেটি ঘাটে পা রাখতেই কানে ভেসে আসে একসাথে বেশ ক’জনের কন্ঠে ‘মহেশখালীর মিষ্টি পান, আগুন পান খেয়ে যান’ বলে সুরেলা আহ্বান। শুনতেও বেশ ভালো লাগে। আগুন পান বিক্রেতারা এমনভাবে পর্যটকদের আহ্বান জানানযেন কোনো মতেই এক খিলি আগুন পান বা মিষ্টি পান না খেয়ে দ্বীপে পা বাড়ানো যেন শুরুতেই গলদ হবে। তাই দেশবিদেশের পর্যটকরা মহেশখালী দ্বীপে ঢুকতেই মুখে নেন মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী বিখ্যাত মিষ্টি পানের খিলি। এই পানের সুখ্যাতি রয়েছে দেশ ছেড়ে বিদেশেও।

জানা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড় সমৃদ্ধ দ্বীপ মহেশখালীতেই উৎপাদন হয় মিষ্টি পান। মহেশখালীর মিষ্টি পানের সুখ্যাতি শুধু দেশজুড়েই নয়, এর কদর রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ সুদূর লন্ডন পর্যন্ত। সিলেটে যেমন সাত রঙের চা বিখ্যাত তেমনি মহেশখালী দ্বীপে আসা পর্যটকদের প্রথম এবং প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এক খিলি আগুন পান খাওয়া। এরপরের অবস্থানে রয়েছে এই দ্বীপের শুটকি।

কী আছে আগুন পানে

সৌখিন পান খাদকদের কাছে মিষ্টি পানকে আরো লোভনীয় ও আকর্ষণীয় করে তুলতে এর সাথে ২০ থেকে ৩০ রকমের রংবেরঙের বাহারি মসলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘আগুন’ পান। মসলাগুলোর মধ্যে রয়েছে নারকেল গুঁড়া, সুপারি গুঁড়া, খেজুর, কিশমিশ, মোরব্বা, নকুল দানা, কালোজিরা, পান পরাগ, এলাচ, সেমাই, চেমনবাহারসহ আরো নানা ফ্লেভারের সুগন্ধিযুক্ত মসলা। আগুন পানের বিশেষ আকর্ষণ হচ্ছে নিজেদের তৈরি করা একধরনের স্প্রে। যেটি ব্যবহার করে এতে আগুন ধরিয়ে খাদকের মুখে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

আগুন পান বিক্রেতারা জানালেন, গ্লিসারিন, পটাশিয়াম ও পানির মিশ্রণে ওই স্প্রে তৈরি করা হয়। প্রতি খিলি আগুন পান বিক্রি হয় ২০৩০ টাকা। বিক্রেতাদের সুরে সুরে ক্রেতা ডাকার আহ্বান ও আগুন সমৃদ্ধ পানের খিলি খাওয়ার এই দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করতে পর্যটকদের যেন হুমড়ি খাওয়া অবস্থা।

মহেশখালী জেটি ঘাটে দীর্ঘদিন ধরে আগুন পান বিক্রি করেন উপজেলার ছোট মহেশখালীর পান ব্যবসায়ী মো. রাসেল। তিনি জানান, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মহেশখালী জেটি ঘাটে মিষ্টি পান ও আগুন পান বিক্রি করে আসছেন। পর্যটন মৌসুমে অধিক হারে পর্যটকদের আগমন ঘটলে তাদের ব্যবসা ভালো চলে। এ সময় তারা প্রতি খিলি পান বিক্রি করেন ৩০ টাকায়। এই মিষ্টি পান মহেশখালীর ঐতিহ্য বহন করে। এই ব্যবসা করে তিনি ভালোই চলছেন।

মহেশখালীতে বেড়াতে আসা ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, আগুন পানের বিষয়টি ইউটিউবেই দেখেছিলাম। আজ মহেশখালীতে এসে বাস্তবে দেখে না খেয়ে মিস করলাম না। আগুনসহ পানটি খেতে প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম। না, পরে দেখি দারুণ অনুভূতি হলো। মহেশখালীর পানটি খেতে খুব মিষ্টি। এই পানের একটা বিশেষত্ব রয়েছে তা বুঝতে পারলাম।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল গাফফার বলেন, মহেশখালীতে বর্তমানে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে মিষ্টি পানের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে পান উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ মেট্রিক টন। মহেশখালীর মিষ্টি পান চাষে আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণসহ আমি নিজেই পান চাষিদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই পান সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দুবাই, মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। দ্বীপের লবণাক্ত আবহাওয়া ও মাটি পান চাষের জন্য উপযোগী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপর্যটকে মুখর কাপ্তাই
পরবর্তী নিবন্ধট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ : কাতারে হামলা হলে পাল্টা হামলা