৩শ আসনে ইভিএম চায় আওয়ামী লীগ

হাওয়া ভবনের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দলীয় কর্মকর্তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব

| সোমবার , ১ আগস্ট, ২০২২ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩শ আসনে ইভিএমে ভোট করার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ‘হাওয়া ভবনের মাধ্যমে’ পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে নিয়োগ পাওয়া দলীয় কর্মকর্তাদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সব নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখাসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে দলটি।

গতকাল নির্বাচন ভবনে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলের পক্ষে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের শেষ দিনে তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। শেষ দিনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিসহ ২৮ দলের সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। বিএনপিসহ সাতটি দল আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি। খবর বিডিনিউজের।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ চার নির্বাচন কমিশনার সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচনে কমিশনের পদক্ষেপের পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কাদের বলেন, ভোট ডাকাতি ও ভোট কারচুপি বন্ধে ইভিএমের কোনো বিকল্প নেই। আমরা ইভিএম মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, চেতনায় ধারণ করি। বিশেষ কোনো এলাকা নয়, ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোটের দাবি জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগ মনে করে, ইসির কাজে ইভিএমসহ প্রযুক্তিসহ সব কার্যক্রমের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের কমিশনের সময়ও কয়েকটি সংসদীয় আসনে, উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে বলে জানান তিনি। বিএনপি ও কিছু দল ইভিএম নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটা কথা শুনতে পাই, নির্বাচনে ভোটারদের অনুপস্থিতির কথা এখান থেকেও বলা হয়। আমি এর সঙ্গে একদম একমত নই। কাগজপত্র এ অফিসে তো আছে; কোনো কোনো এলাকায় মহিলাদের উপস্থিতি, বিশাল লাইন স্থানীয় নির্বাচনে। ভোটারদের অনাগ্রহের যে বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে আর ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে-এটা সবৈব মিথ্যা, এটা অপপ্রচার।
দলের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক রেগুলেটরি কমিশন ‘নির্বাচন কমিশনকে’ সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে।

ইভিএমে ঐক্যমত নেই, স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি : সিইসি জানান, সংলাপে কিছু বিষয় উঠে এসেছে। অনেক দল মনে করছে একদিনে নির্বাচন করা ঠিক হবে না। ভারতের মতো পৃথক দিনে হওয়া উচিত। অনেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য বলেছেন। তবে ইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

হাবিবুল আউয়াল বলেন, আরেকটা বিষয়ে সংকট থেকে যাবে, সেটা হলো ইভিএম। ইভিএম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে সমর্থন পেয়েছি। অধিকাংশ দল ইভিএম বিশ্বাস করছে না। এর ভেতরে কী জানি একটা আছে।… কিন্তু পুরোপুরি ঐক্যমত নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নেব স্বাধীনভাবে। সংবিধান ও বিধি-বিধান অনুসারে নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব পালন করবে।

বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চান সিইসি : আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি জানান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অতিমাত্রায় সমালোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাও তীব্র ও তিক্ত। আমরা নিরপেক্ষ থেকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করে সমালোচনা ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চাই।

আওয়ামী লীগের প্রস্তাবগুলো : ১. নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা ঊর্ধ্বে রেখে সংবিধান ও আইনে প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা প্রদর্শন।

২. নির্বাচনকালীন নির্বাহী বিভাগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/সংস্থার দায়িত্বশীলতা। ৩. নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং এর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ আচরণ। ৪. নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় কর্মকর্তা পর্যায়ে হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক দলীয় নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কমিশনকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৫. বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় দলীয়করণের অংশ হিসেবে পুলিশসহ সিভিল প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ করেছিল। এদের অনেকেই এখন জেলা পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অথবা দায়িত্ব পাওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ। এই সকল দলীয় কর্মকর্তার তালিকা প্রস্তুত করে তাদের সব ধরনের নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে বাইরে রাখতে হবে।

৬. ছবিযুক্ত একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা এবং ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচন কেন্দ্রের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৭. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ বাড়াতে হবে। আগামী নির্বাচনে ইভিএম মেশিনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে হবে। ৮. বেসরকারি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পরিবর্তে প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার পদে নিয়োগ করা।

৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল আচরণ। ১০. দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান অনুযায়ী কোনোভাবেই কোনো দল বা প্রার্থীর প্রতি অনুগত বা কোনোভাবে সম্পর্কযুক্ত হিসেবে পরিচিত বা চিহ্নিত ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া যাবে না।

১১. নির্বাচনে পেশিশক্তি ও অর্থের প্রয়োগ বন্ধ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ সকল পর্যায়ের ভোটারের অবাধ ভোটদানের সুযোগ নিশ্চিত করা। ১২. নির্বাচনের পূর্বে ও পরে সর্বসাধারণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচন পরিচালনার জন্য আবশ্যকীয় সকল সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করা। ১৪. নির্বাচনকালীন সরকারের কর্মপরিধি শুধু আবশ্যকীয় দৈনন্দিন (রুটিন) কার্যাবলীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা। ১৫. এডহক বা অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থার পরিবর্তে টেকসই সাংবিধানিক, আইনি ও রেগুলেটরি ব্যবস্থার উপর নির্ভর করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যালট সকালে কেন্দ্রে পাঠালেই রাতের বিষয়টা আসে না : চুন্নু
পরবর্তী নিবন্ধভোটে সুন্দর পরিবেশের জন্য আগে দরকার সহমত : সিইসি