২৯ ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট নিয়ে টেনশনে ফায়ার সার্ভিস

বেশিভাগের নেই নিজস্ব অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৪:৩১ পূর্বাহ্ণ

নগরীর ২৯টি মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে গত তিন বছর আগে তালিকা প্রকাশ করে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তর। এসব মার্কেটে দীর্ঘ সময় ধরে তাগাদা দেয়ার পরেও শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের অনীহার কারণে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ব্যবসায়ীর কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইসার বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র নেই।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকা তৈরি করার পর থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বারবার ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে ধর্ণা দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ীদের চিঠি পাঠানোর পরেও কাঙ্খিত সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা বারবার উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আমাদের দেশে সাধারণত ১৬ নভেম্বর থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত আবহাওয়া খুব শুষ্ক থাকে। এই সময়টাতে আগুন লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। সময়টা শীতকাল হওয়ায় আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে যায় আগুনের শিখা।

ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভুক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছেকালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। এছাড়া লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার,

ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলি বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দীঘির পাড় এলাকাধীন মার্কেট।

চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দনকানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রিয়াজুদ্দীন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমন্ডি লেইন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট এবং কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকাতে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগ্নিনিরাপত্তায় দেশের নাগরিকরা খুব বেশি সচেতন নন। ফলে অগ্নিদুর্ঘটনায় আমাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও খুব বেশি হয়। প্রায় আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক ভবন আইন মেনে নির্মিত হচ্ছে না। গলিগুলো অত্যন্ত সরু। এসব সরু গলিতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশও অসম্ভব। এছাড়া পুকুর কিংবা জলাধার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে দেখে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকবে না। তাই অগ্নিনিরাপত্তা আইন মেনে প্রত্যেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখতে হবে। পাশাপাশি আগুন নেভাতে শপিং সেন্টারগুলোতে স্বয়ংসম্পূর্ণ অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকা, জরুরি প্রস্থানের সিঁড়ির সংখ্যা ও ছয় তলার ওপরে প্রতি তলায় সেফটি লবির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে বৈদ্যুতিক তারে কনসিল ওয়্যারিং থাকা, বৈদ্যুতিক মেইন সুইচ বক্স ও ডিমান্ড বক্সে নিরাপদ অবস্থানে থাকা এবং স্মোক ও হিট ডিটেক্টর রাখা এবং মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মীদের নিয়মিত অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

জানতে চাইলে নগরীর জহুর হকার্স মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সদস্য সচিব মো. ফজলুল আমিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আমাদের মার্কেটে এসে কয়েকবার অগ্নিনিরাপত্তা মহড়া দিয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মার্কেটে ব্যবসায়ীদের অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জাম রাখতে বলেছি। এছাড়া ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন করার নির্দেশনাও দিয়েছি।

টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমদ হোসাইন বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশ পালনের প্রতিটি ব্যবসায়ীকে নির্দেশ দিয়েছি। কারণ নিরাপত্তা সবার আগে।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শকরা পরিদর্শন করে ব্যবসায়ীদের উদ্বুব্ধ করছেন। যাতে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন এবং অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম কিনেন। বর্তমান জেলা প্রশাসক স্যার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। তিনি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামেও হবে মেট্রোরেল
পরবর্তী নিবন্ধঢাকার মেট্রোরেলের ভাড়া দিল্লি-লাহোরের দ্বিগুণ কেন, প্রশ্ন বিএনপির