২৮ দিন পর এসআই আকবর গ্রেপ্তার

খাসিয়া সেজেও হলো না রক্ষা

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ১০ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:২১ পূর্বাহ্ণ

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদ নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় মূল হোতা এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়া ২৮ দিন পর অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানিয়েছে, কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের গভীর জঙ্গল দিয়ে ভারতে পালানোর সময় আকবরকে গতকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে জনতা আটক করে। পরে রশি দিয়ে বেঁধে তাকে নিয়ে আসা হয়। আটকের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা পুলিশের গোয়েন্দা টিমসহ একাধিক টিম তাকে জনতার হাত থেকে উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, স্থানীয় খাসিয়া সমপ্রদায়ের মানুষের হাতে প্রথমে আকবর আটক হন। এসময় নিজেকে বাঁচাতে তিনি কাঁদতে থাকেন এবং তাকে ছেড়ে দিতে অনুনয় বিনয় করেন। এসময় জনতা তাকে রশি দিয়ে বেঁধে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
পুলিশ আরো জানায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর থেকে আকবর চেষ্টা করেছেন পালিয়ে থাকার। এ ক্ষেত্রে দেশে অনিরাপদ বোধ করায় তিনি বিভিন্ন সোর্স কাজে লাগান, চেষ্টা করেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার। এ উদ্দেশ্যে প্রথমে তিনি সীমান্ত এলাকায় পাড়ি জমান। কানাইঘাটের ডোনা সীমান্তের খাসিয়া পল্লীকেই বেছে নেন তিনি। আশ্রয় নেন ওই পল্লীতেই। পল্লীতে খাসিয়াদের মতো পোশাক পরে গলায় পুঁতির মালা ঝোলান এবং মুখে দাড়িও রাখেন। তার পরনে ছিল খয়েরি রঙের ফুলহাতা শার্ট। নাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা ছিল কোমর। পরিবর্তন আনেন চুলের স্টাইলেও। উদ্দেশ্য ছিল সময়-সুযোগমতো সীমান্ত অতিক্রম করার। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়ে উঠছিল না। কেননা সেখানে ছিল কড়া নজরদারি। ফলে খাসিয়া পল্লীতে তাকে থাকতে হয়েছে বেশ কিছুদিন। একপর্যায়ে খাসিয়ারাই তাকে গ্রেপ্তারে সহযোগিতা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। খবর বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রেপ্তারের সময় আকবর আগ বাড়িয়ে পুলিশকে নিজের পরিচয় দেন। এ সময় তার বেশভূষা অনেকটা খাসিয়া পল্লীতে বসবাসকারীদের মতো ছিল। গলায় পুঁতির মালাও দেখা যায়। সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লুৎফর রহমান জানান, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পথে কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত থেকে জেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, আকবর হোসেনকে পুলিশ ‘কিছু বন্ধুর’ সহযোগিতায় গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, গতকাল (গত রোববার) আমাদের কাছে একটি তথ্য ছিল সে ভারতে পালিয়ে যাবে। তাই আমরা সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নজরদারি শুরু করেছিলাম। পরে আজ (গতকাল সোমবার) সকালে তাকে গ্রেপ্তার করি।
সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আকবর দাবি করেন, ‘সিনিয়র অফিসাররা আমাকে বলেন, যেহেতু সাসপেনশন (সাময়িক বরখাস্ত) হয়ে গেছ, আপাতত তুমি কোথাও চলে যাও। দুই মাস পর সব কিছু ঠাণ্ডা হয়ে গেলে পরিস্থিতি হ্যান্ডল করা যাবে।’ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, আকবরকে ভারতীয় খাসিয়ারা রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছে। কি কারণে রায়হানকে সে হত্যা করেছিল- এ প্রশ্নের জবাবে সে জানায়, ‘রায়হান ছিনতাই করেছিল। এজন্য তাকে মারা হয়েছে।’ রায়হানকে সে একা মারেনি জানিয়ে আকবর জানায়, ‘তাকে ৫-৬ জন পাবলিক মেরেছে। রায়হানকে আমি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম।’
গত ১১ অক্টোবর ভোর রাতে রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করা হয়। পরে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। রায়হান ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন বলে পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হলেও পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ ছিল পুলিশ ধরে নিয়ে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরিবারের অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত দল ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর সত্যতা পেয়ে জড়িত থাকায় ইনচার্জ আকবরসহ চার পুলিশকে বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনগরীর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ডে
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাস লাইনে বিস্ফোরণ নাকি বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট