২৬ মাস বাক্সবন্দি থাকার পর চালু হলো আইভাস মেশিন

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ

রতন বড়ুয়া | মঙ্গলবার , ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

হৃদরোগ বিভাগের জন্য একটি অত্যাধুনিক ইন্ট্রাভাসকুলার আলট্রাসাউন্ড সিস্টেম (আইভাস) মেশিন ক্রয়ে টেন্ডার পরবর্তী কার্যাদেশ দিয়েছিল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হার্টে রিং পরানোর প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের পাশাপাশি সঠিকভাবে রিং বসলো কী না, তা খুব সহজেই যাচাই করা যায় অত্যাধুনিক এ যন্ত্রে। ঢাকার মেসার্স মেডি গ্রাফিক ট্রেডিং লি. নামের এক প্রতিষ্ঠান মেশিনটি ক্রয়ে কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর তারা মেশিনটি সরবরাহও করে। তবে শিপমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতায় সার্ভে কমিটির পক্ষ থেকে মেশিনটি গ্রহণে আপত্তি আসে। সেই আপত্তিতে দুই বছরেরও বেশি সময় (২৬ মাস) ধরে বাক্সবন্দি থাকে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকার এ মেশিন। ২০২১ সালের মে মাস থেকে হৃদরোগ বিভাগের ক্যাথল্যাব কক্ষে মেশিনটি পড়ে ছিল। তবে প্রায় ২৬ মাস বাঙবন্দী থাকার পর সোয়া দুই কোটি টাকার মেশিনটি অবশেষে চালু হয়েছে হৃদরোগ বিভাগে। গত (আগস্ট) মাসের মাঝামাঝি সময়ে মেশিনটি চালু করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আশীষ দে। মেশিনটির মাধ্যমে এরইমধ্যে ১৬/১৭টি টেস্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিএমএসডি (কেন্দ্রীয় ওষুধাগার) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই মেশিনটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। তবে মেশিনটি যেহেতু অনেকদিন ওয়ার্ডে পড়েছিল, তাই ওয়্যারেন্টি সময়সীমা তিন বছরের স্থলে সাড়ে চার বছর নির্ধারণসহ বেশ কয়েকটি শর্তে মেশিনটি নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, হাসপাতালে আনার পর দীর্ঘদিন মেশিনটির ওয়ার্ডে পড়ে থাকা নিয়ে গতবছরের (২০২২ সালের) ১১ এপ্রিল ‘চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ : এক বছর ধরে বাঙবন্দি সোয়া দুই কোটি টাকার মেশিন/প্রস্তুতকারী দেশ থেকে শিপমেন্ট না হওয়ায় অত্যাধুনিক মেশিনটি গ্রহণ করেনি সার্ভে কমিটি’ শিরোনামে একটি প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক আজাদী। ওই প্রতিবেদনে মেশিনটি বাঙবন্দি থাকার তথ্য নিশ্চিত করে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা. আশীষ দে জানান, প্রস্তুতকারী দেশ থেকে শিপমেন্ট না হওয়ায় সার্ভে কমিটি মেশিনটি গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছিল। আপত্তি থাকায় বিধি মোতাবেক মেশিনটি গ্রহণের সুযোগ ছিলনা। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানও মেশিনটি ফিরিয়ে নেয়নি। যার কারণে দীর্ঘ দিন ধরে মেশিনটি পড়েছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অত্যাধুনিক এ মেশিনের দাম দেড় কোটি টাকার কিছু কমবেশি। এই আইভাস মেশিনের সাথে আনুষঙ্গিক হিসেবে ফ্রেকশনাল ফ্লু রিজার্ভ (এফএফআর) নামে আরো একটি মেশিন রয়েছে। এর দামও অর্ধ্ব লাখের কম নয়। সবমিলিয়ে মেশিনটির দাম প্রায় সোয়া ২ কোটি টাকা।

মেশিনটির বিষয়ে করণীয় জানতে মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি চালাচালিও করে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় ওই সময়ে মেশিনটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি হাসপাতাল প্রশাসন। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে মেশিনটি বাঙবন্দি অবস্থায় ওয়ার্ডে পড়েছিল। এই মেশিনের জটিলতা নিরসন না হওয়ায় এবং মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত না আসায় নতুন আরেকটি আইভাস মেশিন চেয়ে চিঠিও দেয় হাসপাতাল প্রশাসন।

তবে সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়ায় নতুন করে সার্ভে কমিটি করা হয়। সার্ভে কমিটির মাধ্যমে মেশিনটি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই আমরা মেশিনটি গ্রহণ করেছি। এরইমাঝে অনেক সময় পার হয়ে যাওয়ায় মেশিনটির ওয়্যারেন্টি সময়সীমাও দেড় বছর অতিরিক্ত ধরা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক।

হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসকরা বলছেন, এই সময়ে একটি অত্যাধুনিক আইভাস মেশিন বিভাগের জন্য খুবই জরুরি। ক্যাথেটারের মাধ্যমে এই মেশিনে টেস্ট সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটি ক্যাথেটারের দাম ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। তবে বর্তমানে সরকারিভাবে ক্যাথেটার সরবরাহ থাকায় এই টেস্টের ক্ষেত্রে রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেয়া হচ্ছেনা। সরকারি পর্যায়ে ক্যাথেটার পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে রোগীর কাছ থেকে ক্যাথেটারের দাম বাবদ ফি আদায় করা হতে পারে। তবে এক ক্যাথেটার দিয়ে ৪ থেকে ৫ জন রোগীর টেস্ট করা যায়। সে হিসেবে এ টেস্টর ক্ষেত্রে একজন রোগীর ২০ হাজার টাকা মতো খরচ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। যদিও গরীব রোগীদের যাতে কোন খরচ দিতে না হয়, সে জন্য সরকারি পর্যায়ে ক্যাথেটার সরবরাহ অব্যাহত রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

আইভাসের ব্যবহার : চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর হার্টে ব্লক দেখা দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রিং পরানোর (স্ট্যান্ট বসানোর) প্রয়োজন পড়ে। ক্ষেত্র বিশেষে ওষুধ দিয়েও এর চিকিৎসা করা হয়। যদিও ব্লকের সাইজ ও সংখ্যার উপর সেটি নির্ভর করে। অত্যাধুনিক এই আইভাস মেশিনের মাধ্যমে রোগীর হার্টের অভ্যন্তরে রক্তনালীর আলট্রসনোগ্রাম করা যায়। যা রক্তনালীর পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে আনে। এতে করে ব্লক দেখা দিলেও হার্টে রিং পরানোর প্রয়োজনীয়তা আছে কী না, প্রয়োজন থাকলেও কোন সাইজের রিং পরাতে হবে, সেটি সহজে যাচাই করা যায়। এমন তথ্য দিয়ে হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজোয়ান রেহান আজাদীকে বলেন, শুধু রিং পরানোর আগে নয়। রিং বসানোর পরও সেটি সঠিকভাবে ও যথাপোযুক্ত স্থানে বসলো কী না, তাও যাচাই করা যায় এ মেশিনে। মোটকথা রিং পরানোর আগে যেমন কাজ দেয়, রিং পরানোর পরও মেশিনটি কাজ দেয়। তাই এটি খুবই জরুরি একটি মেশিন। মেশিনটি চালু হওয়ায় চট্টগ্রামের গরীব রোগীরা উপকৃত হবেন বলেও জানান ডা. রিজোয়ান রেহান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঘোষণার চেয়ে ৫২ টন কম পণ্য রপ্তানির চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধনগর উন্নয়নে ২০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে ফ্রান্স