দীর্ঘ ২৬ বছর পর আগামীকাল ৬ ডিসেম্বর বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বাঁশখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে। মঞ্চ-তোরণ তৈরি সহ যাবতীয় প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ১৯৯৬ সালে নাপোড়া স্কুল মাঠে করা আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকা বেশ কয়েকজন সদস্যের মৃত্যু ও কয়েকজনের বহিষ্কার, আবার নতুন করে পদায়ন সব মিলিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
দলীয় সূত্র জানায়, বর্তমান সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে অধিকাংশ দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে আসলেও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুরের নেতৃত্বে একটি অংশ সব সময় দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে।
এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ প্রতিনিধিসহ ইউনিয়নে-ইউনিয়নে বা ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে বর্ধিত সভা, কর্মীসভার মাধ্যমে জনমত সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে সে সব সভায় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী উপস্থিত থাকলেও অধিকাংশ সম্মেলনে সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর উপস্থিত ছিলেন না।
ফলে আগামীকালের সম্মেলনের সফলতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে প্রায় ১০/১২জন প্রতিনিয়ত এমপির যে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে ঐক্য প্রকাশ করলে ও সম্মেলনে তাদের ভূমিকা কি হবে তা এখন দেখার বিষয়। এদিকে সম্মেলনে সভাপতি পদে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি ও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী ছাড়াও দক্ষিণ জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন মনছুর, দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক খোরশেদ আলমের নাম শোনা যাচ্ছে।
আর সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা, উপজেলা চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি ও কালীপুরের চেয়ারম্যান এডভোকেট আ ন ম শাহাদাত আলম, চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক শীলকূপের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার সহ বেশ কয়জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন বাঁশখালীতে এবং দ্বিতীয় অধিবেশন হবে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় অধিবেশনে কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে। ১৯৯৬ সালে নাপোড়ায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে সভাপতি ও খোরশেদ আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট বাঁশখালী উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, যুগ্ম সম্পাদক রণতোষ দাশ ও সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক রায়হানুল হক চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়। সে সময় এমপি সুলতানুল কবির চৌধুরী (প্রয়াত) পরে অধ্যাপক আবদুল গফুরকে সাধারণ সম্পাদক, মো. এনামকে যুগ্ম সম্পাদক এবং মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পদায়ন করেন। সেই থেকে তারা এ সব পদবী ব্যবহার করে আসছেন।
তবে সে সময়ের সম্পাদক খোরশেদ আলম বর্তমানে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। আগামীকালের সম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে কি না তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। এদিকে সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর বলেন, প্রথমদিনে সমাবেশ হবে, পরের দিন হয়তো চট্টগ্রামে দলের কাউন্সিল হবে। এখানে কে প্রার্থী হবে আর কে পদে আসবে তা এখনও বলা যাচ্ছে না। তিনি স্কুল মাঠে সম্মেলনের আয়োজনের ব্যাপারে অবগত নন বলে জানান। স্কুল মাঠে সম্মেলন আয়োজনের ব্যাপারে বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র এসএম তোফাইল বিন হোছাইন বলেন, আমরা দলীয় অফিসে সভা সমাবেশ করলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয় বিধায় প্রধান শিক্ষককে আহ্বান করেছি ওইদিন শিক্ষা কার্যক্রম সীমিত করার জন্য।
তাছাড়া দলীয় লোকসংখ্যা বেশি হবে তাই বাধ্য হয়ে স্কুল মাঠে আয়োজন করছি। এছাড়া স্কুল মাঠকে বালি দিয়ে সমতল করে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাঁশখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে সম্মেলন করার ব্যাপারে কোনো অনুমতি নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বিষয়টি জানেন না বলে জানান।