২৫ দিন মর্গে পড়ে থাকা আলোচিত উপজাতি তরুণী লাকিংমে চাকমার লাশ অবশেষে তার পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গতকাল সোমবার বেলা ৩ টার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশটি হস্তান্তর করে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। একই দিন বিকালে রামু কেন্দ্রীয় সীমা বৌদ্ধ বিহারে তার মরদেহের সৎকার সম্পন্ন হয়।
লাশ হস্তান্তরকালে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তদন্তে প্রমাণিত হয় নিহত লাকিংমে চাকমার বয়স ১৬ বছর। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় আইন মতে আদালত তার লাশটি পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শিলখালী চাকমাপাড়ার বাসিন্দা উপজাতি তরুণী লাকিংমে চাকমাকে অপহরণ করে বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এই ঘটনায় আদালতে অপরহণ মামলাও করা হয়। তবে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে অপহরণ নয় মর্মে প্রতিবেদন দেয়।
আতাউল্লাহ নামে এক যুবক ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করে লাকিংমে’কে। পরে এফিডেভিট করে তার নাম রাখা হয় হালিমাতুস সাদিয়া। এদিকে গত ১০ ডিসেম্বর স্বামী আতাউল্লাহর ঘরে বিষ পান করে লাকিংমে। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
মৃত্যুর পর লাশ নিতে আবেদন করে স্বামী ও পিতা। লাকিংমে চাকমা বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে জানিয়ে স্বামী আতাউল্লাহ তাকে ইসলাম ধর্মীয় রীতিতে দাফনের আবেদন করেন, তবে সেই দাবি নাকচ করে পিতাও লাশ দাবি করেন। শেষপর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত তদন্তের জন্য র্যাবকে দায়িত্ব দেয়।
র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্জুন চৌধুরী জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তবে লাকিংমে চাকমা অপ্রাপ্ত বয়স্ক এটি প্রমাণিত হয়েছে। সে মোতাবেক লাশটি পিতা-মাতার কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তার তদন্ত চলছে। ময়না তদন্তসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হলে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। তখন চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে। তবে অভিযুক্ত আতাউল্লাহর বড় ভাই মনির উদ্দিন বলেন, আতাউল্লাহ ওই মেয়েটিকে নিয়ে তার কর্মস্থল কুমিল্লায় চলে গিয়েছিল। সেখানে ধর্মান্তরের পর বিয়ে করেছে। প্রায় ছয় মাস আগে স্ত্রীকে নিয়ে আতাউলাহ টেকনাফের বাড়িতে আসে। গত ৯ ডিসেম্বর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে আতাউল্লাহ তার স্ত্রীকে থাপ্পড় দেয়। এর পর রুমে ঢুকে সাদিয়া (লাকিংমে) বিষ পান করে। কঙবাজার হাসপাতালে নেওয়ার পর সে মারা যায়। মৃত্যুর ২৮ দিন আগে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছেন লাকিংমে চাকমা।