পটিয়ায় ছেলের গুলিতে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে মাঈনুদ্দীন মো. মাঈনু (২৯)কে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে মাঈনুর বড় বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, জাপা নেতা ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে খুনের ঘটনায় ছেলে মাঈনুকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরও মাঈনুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক আছে।
ময়না তদন্তের পর গতকাল বুধবার বাদ আসর নামাজে জানাযা শেষে জেসমিন আকতারের মরদেহ পৌরসদরের সবজার পাড়া এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে স্বামী সামশুল আলম মাস্টারের পাশেই সমাহিত করা হয়। স্কুল পড়ুয়া ছোট ছেলে মাশফীকুর আলম মাশফী অস্ট্রেলিয়ায় থাকায় শেষ বারের মতো মায়ের চেহারা দেখতে পারেনি। মামলার এজাহারে বাদী নিপা উল্লেখ করেন, আমার ভাই মাঈনুদ্দিন মো. মাঈনু দীর্ঘ দিন ধরে উশৃঙ্খল জীবন যাপন করে আসছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মাঈনু আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমাকৃত ১৬ লাখ টাকা এককভাবে ভোগদখল করতে তার নববিবাহিতা স্ত্রী আসিফা সুলতানারও লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। আমার বাবা ব্র্যাক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা জমা ছিল। তার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের নমিনি আমি আর জনতা ব্যাংকের নমিনি আমার মা। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে আমি ও আমার মা ব্যাংক গুলোতে বাবার জমাকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য যায়। কিন্তু ব্যাংক গুলোতে টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আমরা বাড়িতে চলে আসি। দুপুর ১.২০ মিনিটের দিকে বাড়িতে পৌঁছালে মাঈনু ছাড়া আমরা কেন ব্যাংকে গেলাম তাই আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে তার কোমরে থাকা পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। ভাগ্যক্রমে প্রথম গুলিটি ফায়ার না হওয়ায় আমি বেঁচে যায়। এসময় আমার মাকে সামনে পেয়ে গুলি করে। গুলি আমার মায়ের ডান চোখের নিচে লাগলে সাথে সাথে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমি চিৎকার চেঁচামেচি করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার সুযোগ মাঈনু পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় মাকে উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে প্রাথমিকভাবে এটি পারিবারিক দ্বন্দ্বই মনে হচ্ছে। সামশুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর থেকে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সেটার রেশ ধরেই মা-ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর এক পর্যায়ে মাকে গুলি করে হত্যা করে মাঈনু। গুলি করার পরপরই সে পালিয়ে যায়। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। গ্রেপ্তার করার পর জানা যাবে হত্যার রহস্য। আর কার অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।