২২% বাড়িতে এডিসের লার্ভা, মাঠে নেমেছে রাঙামাটি পৌরসভা

| রবিবার , ২০ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটিসহ দেশের পার্বত্য জেলাগুলো মূলত ম্যালেরিয়াপ্রবণ হিসেবে পরিচিত। তবে চলতি বছর এর পাশাপাশি বেড়েছে এডিস মশার সংক্রমণ, ফলে বেড়েছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি জরিপ করে রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। সেখানে শহরের ২২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এতে শহরবাসীর মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ এতদিন পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই তাদের দিন কাটাতে হতো। এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডেঙ্গু রোগের ভয়। খবর বিডিনিউজের।

রাঙামাটি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শওকত আকবর বলেন, আগের বছরগুলোয় জেলায় ডেঙ্গু রোগীর তথ্য খুব একটা শোনা না গেলেও চলতি বছর ১৭ আগস্ট পর্যন্ত রাঙামাটি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১২০ ডেঙ্গু রোগী। যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করতে হয়েছে। এ মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ জন। সারাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার যে পর্যায়ে রয়েছে সেখানে রাঙামাটির ২২ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়াকে উদ্বেগের বলে মনে করেন এই চিকিৎসক।

সাধারণত ১০ শতাংশের উপরে গেলেই সেটাকে বিপজ্জনক বলা হয় উল্লেখ করে রাঙামাটির জেলা কীটতত্ত্ববিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, আমাদের জরিপে এই জেলায় ২২ শতাংশ বসতঘরে এডিসের লার্ভা মিলেছে। বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক। এজন্য মশা নিধন কার্যক্রম জোরালো করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। যেসব স্থানে জমানো পানি থাকে, তা যেন কোনোভাবেই মশার আবাসস্থল হতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে শহরে মাইকিংসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগের বছরগুলোয় খুব সামান্য ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর মিললেও এবারের মত এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি। গত জুলাই মাসে শহরের ১৫০টি বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে ২২ শতাংশ বাড়িতেই এডিসের লার্ভা পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লার্ভা মিলেছে কল্যাণপুর, চম্পকনগর, পাথরঘাটা, পুরাতন বাস স্টেশন, তবলছড়ির মসজিদ কলোনি এবং ওয়াপদা কলোনি এলাকায়। এ এলাকাগুলোই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এডিস লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পৌরসভা সময়মতো পদক্ষেপ নিলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না বলে মত তাদের। শহরের সবস্থান এখন পর্যন্ত মশার ওষুধ স্প্রের আওতায় আসেনি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অনেকেই নিজেদের এলাকায় পৌরসভার কর্মীদের মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি বলে অভিযোগ করেছেন।

কেন সময়মতো মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়নি তা জানতে চাইলে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, শুরুতে আসলে আমরাও বুঝতে পারিনি যে এত দ্রুত ও ভয়ংকরভাবে এডিস মশা বংশবিস্তার করছে। পরে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে জানার পরপরই আমরা কার্যক্রম শুরু করেছি। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, জরিপে উঠে আসা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় স্প্রে করা হচ্ছে। পুরো শহরেই স্প্রে কার্যক্রম চলমান, শেষ করতে আর ২০২৫ দিন লাগবে। তবে মশা নিধনে বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সাধারণ মানুষের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই বলেও মনে করেন মেয়র। তিনি বলেন, পাশাপাশি রাঙামাটি সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, শতাধিক আহত
পরবর্তী নিবন্ধচন্দনাইশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ঢুকে নারীকে ধর্ষণ