নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে ভোটারদের কাছে অর্থ সহায়তা চাওয়ার মাত্র ২২ ঘণ্টায় অনুদান হিসেবে ৩৭ লাখ টাকা পেয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা। গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান।
তাননিম জারা লিখেছেন, মাত্র ২২ ঘণ্টায় ৩৭ লাখ টাকা আপনারা পাঠিয়েছেন! ফান্ডরেইজিং লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়ার খুব কাছে আমরা। আপনাদের এই ভালোবাসা ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার ভাষা আমার জানা নেই। আমার নির্বাচনী আসন ঢাকা–৯ (খিলগাঁও, সবুজবাগ, মুগদা)। এখানে একজন প্রার্থী খরচ করতে পারবেন মোট ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। এই টাকাটা উত্তোলন করাই আমার লক্ষ্য। তাই আর মাত্র ৯ লাখ টাকা সংগৃহীত হওয়া মাত্রই আমরা এই ফান্ডরেইজিং ক্যাম্পেইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেব।
সোমবার রাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–৯ আসন থেকে লড়তে নির্বাচনী ব্যয় মেটাতে ভোটার–সমর্থক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও বার্তা শেয়ার করেন ডা. তাসনিম জারা। এরপর মঙ্গলবার ভোরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তাসনিম জারা লেখেন, এতটা অভূতপূর্বভাবে আপনারা পাশে দাঁড়াবেন, তা সত্যিই আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল। আপনাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। খবর বাংলানিউজের।
মঙ্গলবার রাতে দেওয়া পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, রাত ২টার সময় আমাদের বিকাশ অ্যাকাউন্টের লিমিট শেষ হয়ে গেছে। যারা এখনো অনুদান পাঠাতে আগ্রহী কিন্তু বিকাশ সমস্যার কারণে পারছেন না, তারা দয়া করে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ডোনেট করুন। অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছেন যে, যেহেতু বর্তমান বিকাশ অ্যাকাউন্টের লিমিট শেষ, তাই যেন আরও কয়েকটি বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। আপনাদের এই পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ, তবে স্বচ্ছতা এবং সঠিক হিসাবরক্ষণের স্বার্থে আমরা তা করছি না। এর পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ রয়েছে :
১. হিসাববিজ্ঞানের একটা গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম হলো ব্যক্তিগত তহবিল এবং পাবলিক ফান্ড বা অনুদানকে আলাদা রাখা। আমরা যে বিকাশ এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অনুদান নিচ্ছি, সেখানে আমাদের ব্যক্তিগত কোনো লেনদেন করা হয় না। এই অ্যাকাউন্টগুলোর ব্যালেন্সের ১০০% অর্থই আপনাদের অনুদান। এতে করে অন্য কোনো টাকা এখানে মিশে যাওয়ার বা হিসাব গোলমাল হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২. মাল্টিপল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করলে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর প্রয়োজন হয়, যা অনেক সময় অডিটরের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। আমরা একটি নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছি যেন এর লাইফটাইম স্টেটমেন্ট দেখালেই বোঝা যায় ঠিক কত টাকা ঢুকেছে এবং তা কোথায় খরচ হয়েছে। এখানে কোনো কাট–অফ পিরিয়ড থাকবে না।
৩. আমাদের ব্যাংক এবং বিকাশ অ্যাকাউন্টগুলো আমরা এমনভাবে প্রস্তুত রেখেছি যেন ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (যেমন নির্বাচন কমিশন) চাইলে খুব সহজেই এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাচাই করতে পারে। একাধিক অ্যাকাউন্ট থাকলে এই প্রক্রিয়াটি জটিল এবং অস্বচ্ছ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ৪. আপনারা যে টাকা পাঠাচ্ছেন তা আমাদের কাছে একটি পবিত্র আমানত। আমরা চাই এই হিসাবটি যেন এতটাই পরিষ্কার থাকে যে, যে কেউ চাইলে একটি মাত্র স্টেটমেন্ট দেখেই সব বুঝতে পারেন। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আবারো দুঃখ প্রকাশ করছি, কিন্তু বৃহত্তর স্বচ্ছতার স্বার্থে আমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্টকেই বর্তমানে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রসঙ্গে তাসনিম জারা লিখেছেন, শুরু থেকেই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, এই ফান্ডের প্রতিটি পয়সার হিসাব হবে স্বচ্ছ। এই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আমরা নিচের পদক্ষেপগুলো মেনে চলছি : ১. আমরা কোনো ক্যাশ ডোনেশন গ্রহণ করছি না। প্রতিটি অনুদান একটি মাত্র বিকাশ ও একটি মাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আসছে, যার রেকর্ড সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এটি ভবিষ্যতে যাচাই করা যাবে। ২. কোন মাধ্যমে কত টাকা আসছে, তা আমরা আপনাদের নিয়মিত জানাচ্ছি। এই সমস্ত নথিপত্র আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেব, যাতে তারা পূর্ণ স্বচ্ছতা যাচাই করতে পারে। ৩. সংগৃহীত অর্থ ঠিক কোন কোন খাতে কতটুকু ব্যয় করা হবে, তা স্পষ্ট করে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে।











