নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ২১৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। গতকাল দুপুরে চান্দগাঁও থানার দুই এসআই বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন। এর আগে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে শনিবার রাত ১১টার দিকে মৌলভী বাজারের ৯ নম্বর পোল এলাকায় হানিফের ডেরায় ব্লক রেইড দিয়ে তিন হিজড়াসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে হানিফ ও তার সহযোগী দেলোয়ার রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
গ্রেপ্তার হয়েছেন রাব্বি ইসলাম রবিন প্রকাশ মনি হিজড়া (২২), ফরিদুল ইসলাম প্রকাশ ফরিদা প্রকাশ সুন্দরী হিজড়া (২০), মো. বাদশা প্রকাশ ববিতা হিজড়া (১৮), আব্দুল জলিল (২০), দিল মোহাম্মদ (১৮), আব্দুর রহমান (১৮), আকলিমা আক্তার আঁখি (৩৫) ও মো. ইব্রাহিম (২৮)। এরা প্রত্যেকে হানিফের মাদক আস্তানায় দৈনিক বেতনের ভিত্তিতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা এবং মাদক আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাদক আইনের মামলায় ছিনিয়ে নেওয়া হানিফ ও দেলোয়ারসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। হামলার মামলায় এজহারনামীয় ১৪ জন ও অজ্ঞাত ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আটক ৮ জনকে ইতোমধ্যে হামলা ও ভাঙচুর মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মাদক কারবারি হানিফ ও দেলোয়ারকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় মোহরা রেললাইনকেন্দ্রিক মাদক ব্যবসায়ী হানিফের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবাসহ তাকে এবং তার সহযোগী দেলোয়ারকে আটক করে কালুরঘাট ফাঁড়িতে নিয়ে যায় পুলিশ। হানিফকে ডেরা থেকে আটকের ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ভাইকে ছিনিয়ে নিতে হিজড়া বাহিনী নিয়ে কালুরঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় বোন নাজমা আক্তার নাজু (২২)। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হানিফ বাহিনীর সংঘর্ষ হলে গুলিতে গুরুতর আহত হন নাজমা আক্তার নাজু। হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও আহত হন। নাজমাকে উদ্ধার করে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এবং পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
তবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নাজমার মা রুনু বেগম জানান, কালুরঘাট ৯ নম্বর ব্রিজ এলাকায় তাদের বাসা। স্বামী কৃষিকাজ করলেও ছেলে হানিফের টেক্সি আছে। নাজমাও স্বামী-সন্তান নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকতেন। নাজমার তিন ও সাত বছর বয়সী দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
রুনু বেগমের কথার ফাঁকে তার সঙ্গে থাকা রায়হান নামে এক কিশোর নিজেকে হানিফের টেঙির চালক পরিচয় দিয়ে শনিবার রাতের ঘটনার বর্ণনা দেয়। সে জানায়, হানিফ শনিবার বিকালে দেলোয়ারকে নিয়ে বোয়ালখালী গিয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতে। সেখান থেকে ফেরার পথে কালুরঘাট ব্রিজে পুলিশ তাকে আটক করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। হানিফকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে নাজমা ফাঁড়িতে যায়। এ সময় তিনি ঢুকতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয় এবং কাউকে আটক করা হয়নি বলে পুলিশ জানায়। রায়হানের দাবি, পুলিশ কাউকে আটক করা হয়নি জানালেও তারা নিচ থেকে জানালা দিয়ে হানিফকে তৃতীয় তলায় দেখেছিলেন। এ সময় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়লে সংঘর্ষ বাঁধে।