২০২৩ সালের যাত্রায় সওয়ার হবেন কারা

চন্দ্রাভিযান

| সোমবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

 

এ বছর আর্টেমিস ওয়ান মিশনের মাধ্যমে মানবসভ্যতার মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে নাসা। কেবল নাসা নয়, সামনের বছরগুলোতে দূরের মহাকাশে নতুন অভিযানের পরিকল্পনা করছে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলোও। ২০২৩ সালে চাঁদ ও আরও দূরের মহাকাশে নতুন অভিযানের পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া, ভারত আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। ভূরাজনৈতিক রেষারেষির জেরে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখলেও নিজ গতিতে এগোচ্ছে চীন। এছাড়া সার্বিক দৃশ্যপটে সরব উপস্থিতি আছে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর। খবর বিডিনিউজের।

২০২৩ সালে কার পরিকল্পনা কী : আগামী বছরের জুন মাসে চাঁদে ‘চন্দ্রায়ন ৩’ মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। মিশনে একই সঙ্গে একটি ল্যান্ডিং মডিউল এবং রোবটিক রোভার পাঠাতে চায় দেশটি। চাঁদে ভারতের প্রথম মিশন ছিল ২০০৮ সালের ‘চন্দ্রাযান ১’। জুলাই মাসে ‘লুনা ২৫’ মিশন পাঠাবে রাশিয়া। চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে চন্দ্রপৃষ্ঠে একটি লুনার প্রোব অবতরণ করাতে চায় রসকসমস।

২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ‘ডিয়ারমুন’ মিশনে জাপানি ধনকুবের ইউসাকু মায়েজাওয়াসহ আট মহাকাশ পর্যটককে চাঁদের চারপাশে ঘুরিয়ে আনবে ইলন মাস্কের স্পেসএক্স। বিবিসি জানিয়েছে, এক সঙ্গে একশ যাত্রী পরিবহনে সক্ষম স্টারশিপ নভোযানের প্রথম মিশন হবে এটি।

সে তুলনায় ২০২৩ সালে গুরুত্বপূর্ণ কোনো চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা করেনি নাসা। আর্টেমিস টু মিশনের মহাকাশে যাওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। নভোচারীদের চাঁদের চারপাশে ঘুরিয়ে আনবে আর্টেমিস টু মিশন। আর ২০২৫ বা ২০২৬ সাল নাগাদ চন্দ্রপৃষ্ঠে মানব নভোচারীদের পাঠাবে নাসা; ওই মিশনে চাঁদের বুকে প্রথম নারী নভোচারী পৌঁছে দিয়ে ইতিহাস গড়তে চায় যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।

অন্যদিকে, রাশিয়ার সঙ্গে জোট বেঁধে ২০৩৫ সালের মধ্যে চাঁদে নিজস্ব লুনার বেইজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে চীন। তবে, পরিকল্পনার বিস্তারিত এখনও নির্ধারণ হয়নি। চাঁদ নিয়ে এই হঠাৎ আগ্রহের কারণ কী : যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের মতো স্পেস সুপারপাওয়ার হিসেবে পরিচিত দেশগুলো চাঁদে নভোচারীদের জীবনধারণের উপযোগী বাসস্থান নির্মাণ করতে চাইছে বলে মন্তব্য হার্ভার্ডস্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. ম্যাকডাওয়েলের। মঙ্গলের মতো দূর গন্তব্যের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে চাঁদ। আমাদের মহাকাশ প্রযুক্তি পরীক্ষা করে দেখার সেরা জায়গা এটা। আর পৃথিবী থেকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণের চেয়ে চাঁদ থেকে উৎক্ষেপণের জ্বালানি খরচও কম বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ পোর্টসমাউথের মহাকাশ প্রকল্প ব্যবস্থাপক ড. লুসিন্ডা কিং। চাঁদে জ্বালানির উৎসও পাওয়া গেছে বলে দাবি করছেন তিনি। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির উপস্থিতি আমাদের জানা আছে। একে ভেঙে অক্সিজন এবং হাইড্রোজেনে সংগ্রহ করা সম্ভব, যা পরবর্তীতে মঙ্গলসহ দূর গন্তব্যের মহাকাশযানের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। চাঁদে পৌঁছাতে সবার এই তাড়াহুড়ার এটি একটি কারণচাঁদের পানির ওপর নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করা।

১৬ সাইকি’ নামের একটি গ্রহাণু পর্যবেক্ষণের জন্য ২০২৩ সালের গ্রীষ্মে ‘সাইকি স্পেসক্রাফট’ উৎক্ষেপণ করবে নাসা। মহাকাশবিজ্ঞানীদের ধারণা পৃথিবীর সৌরজগতের শুরুর দিনগুলোর একটি গ্রহের শেষ চিহ্ন হচ্ছে ‘১৬ সাইকি’। আর ২০২৩ সালের এপ্রিলে ‘জুপিটার আইসি মুন এক্সপ্লোরার (জুস)’ উৎক্ষেপণ করবে ইউরোপের ২২ দেশের জোট ইএসএ।

বৃহস্পতির তিন চাঁদ গ্যানিমিড, ক্যালিস্টো আর ইউরোপায় জৈবজীবনের চিহ্ন খুঁজবে মহাকাশযানটি। উপগ্রহগুলোর মূল পৃষ্ঠের নিচে বরফে পরিণত হওয়া পানির আধার আছে বলে বিশ্বাস মহাকাশ বিজ্ঞানীদের। তবে, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের প্রতিবাদে ‘ইউক্লিড’ স্পেস টেলিস্কোপ উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার রকেট ব্যবহারের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে ইএসএ। তার বদলে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেট ব্যবহার করবে সংস্থাটি।

রাশিয়ার সঙ্গে মঙ্গল অভিযান নিয়েও কাজ করা বাদ দিয়েছে ইএসএ; ‘এক্সোমার্স’ মিশন ২০২৮ সাল পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর কক্ষপথে ‘শানতিয়ান’ নামের একটি টেলিস্কোপ পাঠাতে চায় চীন। ইতোমধ্যেই চাঁদ আর মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠিয়েছে দেশটি; আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে চীনের ‘তিয়ানগং’ স্পেস স্টেশনের। সামপ্রতিক বছরগুলোতে মঙ্গল ও আরও দূরের মহাকাশে মানবজাতির উপস্থিতি নিয়ে ভাবনাগুলো নতুন আকার নিয়েছে। যে কারণে গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউরোপের পাশাপাশি চীন আর ভারতের মত দেশগুলো স্পেস পাওয়ারে পরিণত হয়েছে। সরকারগুলো ভাবছে, ভবিষ্যৎ যদি এটাই হয় তবে আমাদের দেশ পেছনে পড়ে থাকুক তা আমরা চাইনা, বিবিসিকে বলেন ড. ম্যাকডাওয়েল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনীরব শত্রু কীটনাশক ও আমাদের খাদ্যচক্রে শাক-সবজি
পরবর্তী নিবন্ধবালুচিস্তানে পর পর বিস্ফোরণ নিহত পাঁচ সেনা