ঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের উপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এতে অংশ নেয় সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দলও। ‘বীর চট্টলার বিপ্লবী ছাত্র–জনতা’ নামক ব্যানার হাতে নিয়ে নেতাকর্মীরা রাস্তার মাঝখানে বক্তব্য দেন। গতকাল দুপুর ১২টা থেকে ২ নম্বর গেট মোড় অবরোধ করে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরাসহ অন্যরা এ বিক্ষোভ–সমাবেশ করেন। এসময় সড়কে টায়ার জ্বালানো হয়। নেতাকর্মীদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা। ভিপি নুরের উপর হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশের কারণে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ২ নম্বর গেটের সাথে সংযুক্ত সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কের চতুর্পাশে যানজট দেখা দেয়। বিশেষ করে জিইসি, মুরাদপুর, প্রবর্তক ও টেকনিক্যাল মোড় থেকে ২ নম্বর গেটমুখী সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ভোগান্তিতে পড়েন পথচারী থেকে শুরু করে নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা পর গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা সড়ক ছেড়ে গেলে ফের যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন, জুলাই আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারী নুরুল হক নুর। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি। তাকে সবাই চেনে। অথচ যৌথবাহিনী তার উপরই হামলা করে বসেছে। এ হামলার নিন্দা জানাতে আমরা সমবেত হয়েছি। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দোষীদের গ্রেপ্তার করতে হবে। নেতাকর্মীরা বলেন, জাতীয় পার্টি হচ্ছে আওয়ামী দোসর। হাসিনার দোসর। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিরোধ চলবে। জি এম কাদেরকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এই পার্টির চট্টগ্রামের নেতা সোলাইমান আলম শেঠটে গ্রেপ্তার করতে হবে।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এই সোলাইমান আলম শেঠ চট্টগ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অথচ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করছে না। চব্বিশ পরবর্তী বাংলায় আওয়ামী ও তাদের দোসরদের ঠাঁই নাই বলেও জানান নেতাকর্মীরা। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য এ সময় সমাবেশ এলাকায় উপস্থিত ছিলেন। মানুষের দুর্ভোগ বিষয়ে সমাধানে তাদের কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
অক্সিজেন থেকে চকবাজার যাচ্ছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সলিমুল। তিনি জানিয়েছেন, অনেক্ষণ ধরে বাসে বসে ছিলাম। গাড়ি নড়ছিল না। যার কারণে নেমে পড়েছি। এখন হেঁটেই যাচ্ছি। পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহম্মদ সোলাইমান বলেন, বিক্ষোভকারীরা সড়ক ছেড়ে গেলে বিকাল ৩টার দিকে যান চলাচল ফের শুরু হয়।
পরে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা নগরীর দামপাড়ায় থাকা পুলিশ লাইন তথা সিএমপি কার্যালয় ঘেরাও করেন। তারা সিএমপি কার্যালয় গেইটের সামনে গিয়ে নানা স্লোগান দিয়েছেন। সিএমপির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার কাছে দাবি–দাওয়াও তুলে ধরেন। পদত্যাগ দাবি করা হয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার। তবে নেতাকর্মীরা পুলিশ লাইনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। পুলিশ লাইনের মূল ফটক ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে পুলিশ লাইনের সামনের সড়ক ছেড়ে চলে যান গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। এতে বন্ধ হয়ে পড়া সড়কের যান চলাচল ফের শুরু হয়। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিক্ষোভকারীরা সরে গেলে পুলিশ লাইনের সামনের সড়কে ফের যান চলাচল শুরু হয়।
গত ২৯ আগস্ট শুক্রবার ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হলে লাঠিচার্জ করে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী। এতে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়। এ ঘটনায় ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখায় গণঅধিকার পরিষদ। রাতে নগরীর ২ নম্বর গেইটে সড়ক অবরোধ করে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। ঢাকা থেকে ঘোষণা করা হয় কর্মসূচি। উক্ত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ২ নম্বর গেইটে অনুষ্ঠিত হয় এ বিক্ষোভ সমাবেশ।