রাঙ্গুনিয়ার ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সংকটের মধ্যে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের ৩১ শয্যার মূল ভবনটি তিন বছর আগে জরাজীর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ১৯ শয্যার ভবনে স্থানান্তর করা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। এরপর গেল তিন বছর ধরে ১৯ শয্যার ভবনে চলছে ৫০ শয্যার চিকিৎসা। একদিকে ভবন সংকট, অন্যদিকে নেই চর্ম ও মেডিসিন কনসালটেন্টসহ পর্যাপ্ত চিকিৎসক। এভাবে ধুঁকে ধুঁকে চলছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম।
সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে ৩১ শয্যা নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এরপর ২০০৬ সালে নতুন আলাদা ভবন হলে তা ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ গত ২০২২ সনে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যার মূল ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এই জীর্ণ ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ পরিকল্পনা করা হলেও এতো বছরেও তা হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে চতুর্থ তলার উর্ধ্বমূখী সমপ্রসারণ কার্যক্রমটিও দেশের পট পরিবর্তনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে পরিত্যক্ত ভবনটির ছাদ সুড়কি আস্তর খসে পড়ছে। এই বিপজ্জনক অবস্থায় পরিত্যক্ত ভবনের ছাদের নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে রোগীরা। এতে যে কোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। সরেজমিনে জানা যায়, নতুন ১৯ শয্যার ভবনে চলছে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম। ছোট পরিসরে এই ভবনে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থাসংকুলান হচ্ছে না। অতিরিক্ত রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য মেঝে এবং বারান্দায় গাদাগাদি করে সিট বিন্যাস করা হয়েছে। এতে গাদাগাদি অবস্থায় চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। এই ভবনের ২য় তলার একদিকে অফিস, ওটি রুম, লেবার রুম সাথে রাখা হয়েছে ১৫ শয্যা। এরপর তৃতীয় তলায় নার্স ও চিকিৎসকদের রেস্টরুম, কনফারেন্স কক্ষসহ রয়েছে ৩৫ সহ্যার চিকিৎসা ব্যবস্থা। এভাবে গাদাগাদি অবস্থায় রোগীরাও যেমন কষ্টের মাঝে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন, অন্যদিকে চিকিৎসক, নার্স ও অফিস স্টাফরাও নানা প্রতিবন্ধকতা মাথায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ জন রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসেন। এক চেম্বারে বসেন একাধিক ডাক্তার। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৭০ জন রোগী আসে ভর্তীর জন্য। এতে ভীড় জমে যায়। হাসপাতালে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। সার্জারী, অর্থোপেডিক, শিশু, গাইনী এবং এনেস্থেসিয়ার ৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছে। কিন্তু চর্ম ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। অন্যদিকে হাসপাতালে ১৪ জন ম্যাডিকেল অফিসার আছে। এরমধ্যে কয়েকজন এটাসমেন্টে অন্য হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে। এছাড়া তিন জন চিকিৎসক দেশের বাইরে চলে যাওয়ায় চাকুরী করছেন না। ফলে এই পোস্টগুলোও খালী পড়ে রয়েছে। রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে মোম ও টর্সের আলোয় চলে চিকিৎসা সেবা। কারণ একমাত্র জেনেরেটরটিও দীর্ঘদিন ধরে বিকল পড়ে রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জয়নাব জমিলা বলেন, নানা সংকটের মাঝেও ডাক্তার এবং কর্মচারীরা আন্তরিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সংকট দূর করতে জেলার সভায় এবং উর্ধ্বতন মহলে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনি শর্মা গণমাধ্যমকে বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ডিপিপিটি অনুমোদন হলে, চলতি অর্থবছরের মধ্যেই কাজটি শুরু করা যাবে। এছাড়া ওপিডি ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সমপ্রসারণ কাজটিও চতুর্থ ওপির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আপাতত বন্ধ আছে। এটিও আগামী বছরের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।