১৯ আইসিডিতে কাল থেকে রপ্তানি পণ্য ও খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং বন্ধ

খরচ পোষাচ্ছে না, জানাল গ্রাহকদের সংকটে পড়বে রপ্তানি বাণিজ্য ও চট্টগ্রাম বন্দর এটা বিকডার সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয় : মহাসচিব

হাসান আকবর | বুধবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠা ১৯টি বেসরকারি কন্টেনার ডিপো আগামীকাল থেকে একযোগে রপ্তানি পণ্য এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং বন্ধ করে দিচ্ছে। খরচ পোষাচ্ছে না উল্লেখ করে প্রতিটি ডিপো আলাদাভাবে তাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছে, ১১ ডিসেম্বর থেকে রপ্তানি পণ্য বোঝাই এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। ডিপোগুলো চার্জ বৃদ্ধি কার্যকর করতে না পারায় এখন তাদের খরচ পোষাচ্ছে না বলে দাবি করেছে। তাদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত করলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এবং চট্টগ্রাম বন্দর সংকটে পড়ে যাবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি উদ্যোগে ১৯টি বেসরকারি আইসিডি গড়ে তোলা হয়েছে। এসব আইসিডিতে কয়েক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিং কিংবা গতিশীলতা এসব আইসিডির কার্যক্রমের ওপর বহুলাংশে নির্ভর করে। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রায় দ্বিগুণ কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেনার ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার টিইইউএসের কাছাকাছি। বেসরকারি আইসিডিগুলোর ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ছয় হাজার টিইইউএস। বেসরকারি আইসিডিগুলোতে বছরে প্রায় ২২ লাখ কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। এসব আইসিডিতে রপ্তানির সব পণ্যই কন্টেনারজাত করে জাহাজিকরণের জন্য বন্দরে পাঠানো হয়। বন্দর থেকে আনা হয় বিদেশ থেকে ফেরত আসা খালি কন্টেনার।

বেসরকারি আইসিডি মালিকদের সংগঠন বিকডা গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯টি ডিপোতে বিভিন্ন সেবার চার্জ বৃদ্ধি করে। এই বৃদ্ধির হার গড়ে ৫০ শতাংশ বলে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। ব্যবসায়ীরা ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন, ট্যারিফ কমিটির মতামত বা কোনো তোয়াক্কা না করে বিকডা একতরফাভাবে কন্টেনার হ্যান্ডলিং চার্জ গড়ে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়ে সংকট তৈরি করেছে। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায় এবং মামলার কারণে বিকডা চার্জ বৃদ্ধি করতে পারেনি।

বেসরকারি ডিপোর একজন কর্মকর্তা বলেন, চার্জ বৃদ্ধি না হওয়ায় ডিপো মালিকদের খরচ পোষাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের পক্ষে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে উঠেছে। ফলে ডিপো মালিকেরা আগামীকাল ১১ ডিসেম্বর থেকে বন্দর থেকে কোনো খালি কন্টেনার ডিপোতে নেবেন না, করবেন না কোনো খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং। একইসাথে ডিপোতে এনে রপ্তানি পণ্য কন্টেনারজাত করে বন্দরে পাঠানোর কাজও তারা করবেন না। ফলে খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে না।

বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার গত রাতে আজাদীকে বলেন, এটা বিকডার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নয়। বিকডা সাংগঠনিকভাবে এটার সাথে জড়িত নয়। তবে বেসরকারি ডিপো মালিকেরা আলাদা আলাদাভাবে তাদের অপারগতার কথা তাদের গ্রাহকদের জানিয়ে দিয়েছেন। ১১ ডিসেম্বর থেকে তাদের পক্ষে আর রপ্তানি পণ্য এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং সম্ভব হবে না বলেও গ্রাহকদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে শিপিং লাইন্সগুলোকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

বেসরকারি ১৯টি ডিপো রপ্তানি পণ্য এবং খালি কন্টেনার হ্যান্ডলিং বন্ধ করে দিলে দেশের রপ্তানি বাণিজ্য এবং চট্টগ্রাম বন্দর সংকটে পড়বে বলে মন্তব্য করে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের শতভাগ রপ্তানি পণ্য উক্ত ১৯টি ডিপো হ্যান্ডলিং করে। ডিপোগুলো রপ্তানি পণ্য গ্রহণ এবং কন্টেনারে ভরে বন্দরে প্রেরণ না করলে রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। অপরদিকে বন্দর থেকে খালি কন্টেনার বের করে আনা না হলে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেনারজটের কবলে পড়বে। বিষয়টি উদ্বেগের।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেছেন, বিষয়টি শুনেছি। তবে আমাদেরকে বিকডা থেকে কোনো চিঠি দেয়া হয়নি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারীদের সামনে রেখেই গড়ে উঠুক নতুন বাংলাদেশ
পরবর্তী নিবন্ধসৌর বিদ্যুতের বাতিল ১২ প্রকল্প ফিরল, কমছে খরচ