গল টেস্টের উইকেট যেন তক্তায় পরিণত হয়েছে। ব্যাটারদের আউটই করা যাচ্ছে না। ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষে বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে উইকেট ইচ্ছে করে আউট না হলে যেন ব্যাটারকে আউট করা যাবে না। তারপরও বাংলাদেশের মতো শ্রীলংকাও অলআউট হয়েছে তাদের প্রথম ইনিংসে। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ৪৯৫ রানের জবাবে স্বাগতিক শ্রীলংকা অলআউট হয়েছে ৪৮৫ রানে। আর তাতে বাংলাদেশ লিড পায় ১০ রানের। জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১৭৭ রান। আর তাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার চেয়ে ১৮৭ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। হাতে উইকেট আছে ৭টি। আপাত দৃষ্টিতে গল টেস্ট নিশ্চিত ড্রয়ের দিকে এগোচ্ছে। তারপরও ক্রিকেট যেহেতু গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, সেহেতু নিশ্চিত করে কোন কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ম্যাচের চার দিন শেষে স্বাগতিকদের উপর দারুণ প্রভাব বিস্তার করছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে শান্ত এবং মুশফিকের সেঞ্চুরির সুবাধে রানের পাহাড়ে চড়েছিল বাংলাদেশ। জবাবে লঙ্কানরাও ভালো জবাব দিয়েছে। বাংলাদেশ দলের স্পিনার নাঈম হাসান যেন মাটি কামড়ে লড়াই করেছে লঙ্কান ব্যাটারদের বিপক্ষে। নিয়েছেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশ যে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১০ রানের লিড পায়, তা মূলত নাঈম হাসানের দারুণ বোলিংয়ে। দেশের বাইরে প্রথমবার বোলিং করেই ৫ উইকেট শিকার করেন এই অফ স্পিনার। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৮৫ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান নিয়ে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। আগের ইনিংসে ব্যর্থ হওয়া সাদমান ইসলাম এবার খেলেন ৭৬ রানের দারুণ ইনিংস। কিন্তু নিজের হাফ সেঞ্চুরিটাকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারলেন না সাদমান। অপরদিকে প্রথম ইনিংসে ১৪৮ রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত তুলে নিয়েছেন আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি। দিন শেষে অপরাজিত আছেন তিনি।
গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান নিয়ে দিন শুরু করা শ্রীলঙ্কা শুরুতেই ধাক্কা খায়। দিনের তৃতীয় ওভারে নাঈমের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে কিপারের কাছে ধরা পড়েন অধিনায়ক ধানাঞ্জায়া ডি সিলভা। করেন ১৯ রান। একটু পর হাসান মাহমুদের লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারিতে উইকেট হারান কুসাল মেন্ডিস। উইকেটের পেছনে অসাধারণ ক্যাচ নেন লিটন কুমার দাস। জোড়া উইকেটের ধাক্কা সামলে সপ্তম উইকেটে ৮৪ রানের জুটি গড়েন কামিন্দু মেন্ডিস ও মিলান রাত্নায়াকে। ৩৯ রান করে হাসানের বাইরের বল স্টাম্পে টেনে আনেন মিলান। পরের ওভারেই নাঈমের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বিদায় নেন কামিন্দু মেন্ডিস। আরেকটি ভালো ক্যাচ নেন লিটন। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের দুই টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি ও অপরাজিত ৯২ রানের একটি ইনিংস খেলা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান এবার ফিরেন ৮৭ রান করে। শেষ দুই উইকেট দ্রুত নিয়ে নাঈম পূরণ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ৫ উইকেট। শ্রীলঙ্কা ১৫ রানের মধ্যে হারায় শেষ চার উইকেট। ১২১ রানে ৫ উইকেট নেন নাঈম হাসান। ৭৪ রানে ৩ উইকেট নেন হাসান মাহমুদ।
১০ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশ আবারও শুরুতেই হারায় এনামুল হককে। প্রথম ইনিংসে রানের খাতা খুলতে না পারা এনামুল এবার করেন ৪ রান। সাত টেস্টের ক্যারিয়ারে তার মোট রান এখন ১৪৩। মুমিনুল হক একটি ছক্কা মারলেও আউট হয়ে যান ১৪ রান করে। অযথা সুইপ করতে গেলে বল তার ব্যাট ছুঁয়ে হেলমেটে লেগে যায় শর্ট পয়েন্ট ফিল্ডারের হাতে। তৃতীয় উইকেটে সাদমান ও শান্ত যোগ করেন ৬৮ রান। দারুণ খেলছিলেন সাদমান। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির পর ইনিংসটাকে তিন অংকে নিয়ে যেতে পারলেন না। ১২৬ বলে ৭৬ করে আউট হন সাদমান। মেরেছেন ৭টি চার। এরপর প্রথম ইনিংসের মতো হাল ধরেন মুশফিক এবং শান্ত। অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটি গড়ে দিন শেষ করেন প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ান শান্ত ও মুশফিক। ১১৩ বলে ৫৬ রানে অপরাজিত শান্ত। আর ৪৩ বলে ২২ রান নিয়ে আজ আবার ব্যাট করতে নামবেন মুশফিক। আজ শনিবার শেষ দিনে খেলা হবে ৯৪ ওভার।