১৭৭ সড়কের তালিকা প্রস্তুত

প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করবে চসিক মেয়রের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৪ মার্চ, ২০২১ at ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সংস্কারের জন্য নগরের ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৭ সড়কের তালিকা প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রতিশ্রুত ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আটটি ডিভিশনের মাধ্যমে তালিকাটি প্রস্তুত করে প্রকৌশল বিভাগ। প্রাথমিকভাবে প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সড়কগুলো যান চলাচলের উপযোগী করার লক্ষ্য আছে মেয়রের। পরবর্তীতে প্রকল্প প্রণয়ন করে সড়কগুলোর ব্যাপক সংস্কার করার পরিকল্পনা আছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বর্ষায় নগরের প্রধান সড়কের ১৭০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এর বাইরে ওয়ার্ড পর্যায়েও বিভিন্ন সড়কের অবস্থা আরো বেহাল হয়। আর্থিক সংকট থাকায় সংস্কার কাজে বেগ পেতে হয় চসিককে। সড়ক সংস্কারের জন্য ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে দুই দফায় ৯০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দও চেয়েছিল চসিক। কিন্তু মিলেনি কাঙ্খিত বরাদ্দ। ফলে সংস্কার কাজ শুরু করলেও মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় দায়িত্ব নিয়েই সড়ক সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা করেন মেয়র। এ বিষয়ে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের প্রথমদিন ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা জানিয়েছিলাম। সে আলোকে ইতোমধ্যে মশক নিধনে ওষুধ ছিটানো ও খাল-নালা পরিষ্কার কাজ শুরু করেছি। এখন এখন সড়ক সংস্কারে কাজে হাত দিয়েছি। এজন্য কোথায় কোথায় ভাঙা সড়ক আছে তার তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিদিন প্যাচওয়ার্ক করা হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, একশ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন করে রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হবে না। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও সক্ষমতা, ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত-প্রকৌশলগত পরিকল্পনা প্রয়োজন। সেটা আমরা করব। প্রাথমিকভাবে একশ দিনের মধ্যে রিপেয়ার করে যান চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা করছি। বর্ষার আগে খানাখন্দগুলো ঠিক হয়ে গেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে আসবে। পিসি রোডের কাজের গতি বাড়াতে নির্দেশনা দিয়েছি।
এদিকে প্রকৌশল বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ডিভিশনের তালিকার মধ্যে আবার অগ্রাধিকার দিয়ে সাতদিনের কর্মপরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সে আলোকে গত সোমবার থেকে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। নিজস্ব অ্যাসপল্ট প্ল্যান্টে তৈরি মিক্সার (ইট, বালি, সিমেন্ট, বিটুমিনের মিশ্রণ) দিয়ে চলছে এ সংস্কার কাজ। দৈনিক ৬০ থেকে ৭০ টন মিক্সার ব্যবহার করা হচ্ছে। কাজ করছে শতাধিক শ্রমিক।
চসিকের তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) সুদীপ বসাক দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের একশ দিনের কর্মপরিকল্পনা সফল করতে প্রকৌশল বিভাগ দিনরাত কাজ করছে। বিভিন্ন ডিভিশন যে তালিকা করেছে সে আলোকে প্যাচওয়ার্কের কাজ চলছে। যেমন আজকে (গতকাল বুধবার) মিমি সুপার মার্কেট থেকে বিপ্লব উদ্যান, গোসাইলডাঙ্গা বেচাশাহ রোড, ডিসি রোডের মিয়ার বাপের মসজিদ, পাথরঘাটা, বক্সিরহাট, ওমর আলী মাতব্বর রোড, ফতেয়াবাদ সন্দ্বীপ কলোনি, এয়ারর্পোট রোড, সিডিএ আবাসিকের এক ও দুই নম্বর রোড এবং হালিশহর বি ব্লকের প্যাচওয়ার্ক করেছি। এতে ৬৩ টন মিক্সার ব্যবহার করেছি।
সংস্কারের জন্য প্রস্তুতকৃত তালিকা সূত্রে জানা গেছে, এক নম্বর ডিভিশনে ২৫টি, দুই নম্বর ডিভিশনে ৩৪টি, তিন নম্বর ডিভিশনে ২৬টি, পাঁচ নম্বর ডিভিশনে ১৩টি, ছয় নম্বর ডিভিশনে ২৬টি, সাত নম্বর ডিভিশনে ১৯টি, আট নম্বর ডিভিশনে ২৮টি এবং নয় নম্বর ডিভিশনে ১৭টি সড়ক রয়েছে। ১, ২ ও ৩ নম্বর ডিভিশনের তালিকায় চার নম্বর ডিভিশনের সড়কগুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রস্তুতকৃত তালিকার এক নম্বর ডিভিশনে লালখান বাজার, বাগমনিরাম, দেওয়ান বাজার, জামালখান ও এনায়েত বাজার ওয়ার্ড অর্ন্তভুক্ত। দুই নম্বর ডিভিশনে রযেছে উত্তর পাঠানটুলী, উত্তর আগ্রাবাদ, পশ্চিম মাদারবাড়ি, পূর্ব মাদারবাড়ি ও গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ড। তিন নম্বর ডিভিশনে আছে চকবাজার, পশ্চিম বাকলিয়া, পূর্ব বাকলিয়া, দক্ষিণ বাকলিয়া, আলকরণ, আন্দরকিল্লাহ, ফিরঙ্গিবাজার, পাথরঘাটা ও বক্সিরহাট ওয়ার্ড। পাঁচ নম্বর ডিভিশনে মোহরা, পূব ষোলশহর, পম্‌িচম ষোলশহর ও শুলকবহর ওয়ার্ড। ছয় নম্বর ডিভিশনে দক্ষিণ পাহাড়তলী, জালালাবাদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ওয়ার্ড। সাত নম্বর ডিভিশনে উত্তর মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, উত্তর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড। আট নম্বর ডিভিশনে সরাইপাড়া, রামপুর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ ও উত্তর মধ্যম হালিশহর। নয় নম্বর ওয়ার্ডে আছে উত্তর পাহাড়তলী, উত্তর কাট্টলী, দক্ষিণ কাট্টলী, পাহাড়তলী ও উত্তর হালিশহর।
প্রস্তুতকৃত তালিকায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর মধ্যে উল্লেখযাগ্য হচ্ছে- জামালখানের কে বি আবদুস সাত্তার রোড, এনায়েত বাজার বাটালি রোড ও মহিলা কলেজ রোড, দেওয়ান বাজারের সিরাজদ্দৌলা রোড, গোসাইলডাঙ্গার বেচা শাহ রোড, বাকলিয়ার ডিসি রোড, হাটখোলা ব্রিজ রোড ও কেবি আমান আলী রোড, পশ্চিম ষোলশহরের মোহাম্মদপুর রোড, ষোলকবহরের সিডিএ এভেনিউ, বহাদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নিচে, মোহরার দেওয়ান মহসিন রোড, জালালাবাদের খাজা রোড ও তুফানী রোড, বিমানবন্দর সড়ক থেকে বোট ক্লাব পর্যন্ত, দক্ষিণ পতেঙ্গার গোল্ডেন বিচ রোড, আগ্রাবাদের সাইফুল আলম বাবুল সড়ক, সিডিএ আবাসিক এলাকার ২২ নম্বর রোড, আবদুল গণি রোড, কাট্টলীর কর্নেল জোন্স রোড, পাহাড়তলীর কৈবল্যধাম সড়ক ও উত্তর কাট্টলীর প্রাণহরি দাশ রোড।
উল্লেখ্য, চসিকের চলতি অর্থ বছরের বাজেটে রাজস্ব তহবিল থেকে সড়ক ও ফুটপাত উন্নয়নে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পাশাপাশি সড়ক সংস্কারের জন্য বিটুমিন, পাথর, ইট, বালি ও খোয়া এবং রড সিমেন্ট ক্রয়ে বরাদ্দ আছে আরো ৩৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এর আওতায় এবং জাইকাভুক্ত চলমান আরো চারটি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৫১০ কোটি টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরামুর বৌদ্ধ বিহার পরিদর্শনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত
পরবর্তী নিবন্ধগালি দেয়ায় মাথায় আঘাত ও বালিশ চাপায় হত্যা