নতুন অর্থবছরের (২০২৪–২০২৫) প্রস্তাবিত বাজেটে নগর উন্নয়নে ১৭ প্রকল্পে ৭ হাজার ৩৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে জলাবদ্ধতা নিরসনে চার প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১ হাজার ৮০৮ কোটি। বাকি অর্থে শহরের রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও আলোকায়ন, পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন করা হবে। বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ভবন নির্মাণে ২২৭ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করা হবে। নগরের তিন সেবা সংস্থার মধ্যে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সিডিএ।
গত বৃহস্পতিবার ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণে অঙ্গীকার’ শিরোনামে ঘোষিত ২০২৪–২০২৫ অর্থ বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। অতীতের ন্যায় এবারও জাতীয় বাজেটে গুরুত্ব পেয়েছে চট্টগ্রাম। গত অর্থবছরে (২০২৩–২০২৪) প্রস্তাবিত বাজেটে চট্টগ্রাম মহানগর উন্নয়নে ১৮ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৭ হাজার ২০৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
কোন সংস্থার জন্য কত বরাদ্দ : প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নগরের তিন সেবা সংস্থার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) পাঁচ প্রকল্পে ৫৫০ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসার দুই প্রকল্পে ৬০০ কোটি এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ছয় প্রকল্পে ২ হাজার ২৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গণপূর্তের দুই প্রকল্পে ২২৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের দুই প্রকল্পে ৩ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাখা হয়।
চসিকের প্রকল্প : চসিকের প্রকল্পগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কের উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে ৩৯৫ কোটি টাকা, মর্ডানাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্ট এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রকল্পে ১০১ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা, বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া থেকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত খাল খনন প্রকল্পে ২ কোটি টাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও বাস–ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
সিডিএর প্রকল্প : সিডিএর প্রকল্পগুলোর মধ্যে সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পে (পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত চতুর্থ সংশোধিত) ৩০০ কোটি টাকা, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ৩২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, কর্ণফুলী নদীর তীর বরাবর কালুরঘাট সেতু থেকে চাক্তাই খাল পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ (২য় সংশোধিত) প্রকল্পে ৪০০ কোটি টাকা, জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পে ১ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, প্রিপারেশন অব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন মাস্টারপ্ল্যান (২০২০–২০৪১) প্রকল্পে ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহেরর সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন গুচ্ছ প্রকল্পে ৩৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা : চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পগুলোর মধ্যে ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পে (২য় সংশোধিত) ৫২ কোটি এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পে (প্রথম পর্যায়) ৫৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুই প্রকল্প : চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে ৪৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পে ১৮০ কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড : পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলমগ্নতা বা জলাবদ্ধতা নিরসন ও নিষ্কাশন উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে’ ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর : চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে (চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশ এবং প্রথম সংশোধিত) ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং একই প্রকল্পে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর অংশে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা।