চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) সেই কারখানার ভয়াবহ আগুন ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা রাতভর চেষ্টা চালিয়ে গতকাল সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। অন্যদিকে রাত ১০ টার দিকে ভবনের দ্বিতীয় ও তলায় আগুন জ্বলে উঠেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট আগুন পুরোপুরি নেভানোর কাজ করছে। আগুনে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কো ভবনে অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেঙটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল কোম্পানি নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের কারখানার প্রায় সম্পূর্ণভাবে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসায় ব্যবহৃত পোশাক ও সরঞ্জাম তৈরির এই কারখানায় প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে।
সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান বলেন, আমরা ফায়ার সার্ভিস, সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। আগুন লাগার পর এলাকাটি কর্ডন করা এবং শ্রমিকদের নিরাপদে নিয়ে আসা আমাদের প্রথম কাজ। ইনজুরি ও ক্যাজুয়ালিটি ছাড়া শ্রমিকদের বের আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের সব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর আগে ফায়ার কমপ্লায়েন্স সনদ নিতে হয়। এ ভবনও কমপ্লায়েন্সের আওতায় ছিল।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটের দিকে অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেঙটাইল লিমিটেড ও জিহং মেডিকেল কোম্পানির গুদামে আগুন লাগে। অ্যাডামস তোয়ালে, ক্যাপ এবং জিহং মেডিকেল সার্জিক্যাল গাউন তৈরির কারখানা। কারখানা ভবনটি সাততলার। দুটি কারখানার গুদামই সাততলায়, যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সাততলার পুরো ভবনটিতেই। থেমে থেমে কারখানাটির ভেতরে ছোট আকারে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় রাতে। নগরীর বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট ১৯টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়। তবে আগুনের ভয়াবহতার কারণে তাদের বেগ পেতে হয়। শুরু থেকেই সিইপিজেডে অবস্থানরত সেনাবাহিনীর একটি টিম ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট এবং পরবর্তীতে বিমানবাহিনীর একটি ইউনিটও অংশ নেয়।
সন্ধ্যার পর আগুন ক্রমে নিচতলায় পৌঁছে পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। তীব্র উত্তাপে আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পরিবেশ অসহনীয় হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনা এড়াতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশের সদস্যরা ভবনটি ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেন।
আগুনের তীব্রতায় ভবনটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত অষ্টম তলার কিছু অংশ ধসে পড়ে। তবে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।