বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সরকারের একটানা ১৫ বছরের মেয়াদকালীন পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে ১৩৬৪ কোটি টাকার প্রকল্প। পাহাড়ে বর্তমান সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে বদলে গেছে এখানকার মানুষের জনজীবন। বদলে গেছে পার্বত্য জনপদ। একসময়কার পিছিয়ে পড়া পার্বত্য জনপদ এখন উন্নয়নের দিকে অনেকটা এগিয়ে গেছে।
রাঙামাটি জেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ২০০৯–২০২৩ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১০২৬.৭৭ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক উন্নয়ন ও পূনর্বাসন, ব্রিজ–কালভার্ট নির্মাণ, গ্রামীণ হাট বাজার/উন্নয়ন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ (কাপ্তাই), উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন প্রকল্প, সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, উপজেলা কমপ্লেঙ ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেঙ ভবন নির্মাণ প্রকল্প, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ভবন নির্মাণ। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের আওতায় রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাকে সড়ক যোগাযোগের আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে ২০২১ সালে একনেক সভায় ৩৩৮ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্পে কাপ্তাই উপজেলা থেকে বিলাইছড়ি উপজেলা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ১৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে এই মেগা প্রকল্পটির কাজ চলমান রয়েছে। সর্বমোট ১৫ বছরে ১৩৬৪.৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল ও কাপ্তাইয়ে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর; চন্দ্রঘোনায় আঞ্চলিক রেশম গবেষণা কেন্দ্র; নানিয়ারচরের ঘিলাছড়ি বাজারে, লংগদু কালপাকুজ্যা বাজারে, রাজস্থলী সদরে, বাঘাইছড়ির মাহিল্যা বাজার ও বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজারে কিচেন মার্কেট নির্মাণ; রাঙামাটি সদরের আসামবস্তী–কাপ্তাই সড়ক।
বাঘাইছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, রাঙামাটি এলজিইডির অর্থায়নে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং দুর্গম উপজেলা বাঘাইছড়িতে অনেক উন্নয়ন করেছে। যা অন্য সরকারের আমলে হয়নি। এজন্য আমি বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাঘাইছড়ি পৌর মেয়র মো. জমির হোসেন বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় পাহাড়ের আনাচে–কানাচে অভূতপুর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এলজিইডির অর্থায়নে বাঘাইছড়ি পৌরসভা থেকে–লংগদু উপজেলার যে সংযোগ সড়ক নির্মিত হয়েছে এর ফলে তিনটি ইউনিয়নের সাথে বাঘাইছড়ি পৌর এলাকা সংযুক্ত হয়েছে।
লংগদু উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বাবুল দাশ বাবু বলেন, এক সময়কার অনুন্নত লংগদু উপজেলা ১৫ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। লংগদু সদর উপজেলায় এলজিইডি ৬০–৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পাঁকা ভবন নির্মাণ করেছে। লংগদু উপজেলার কালাপাকুজ্যা ইউনিয়নটি এক সময়ে যোগযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক অবস্থা ছিল বর্তমানে ইউনিয়নটিতে ৫টি ব্রিজ নির্মিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, মসজিদসহ অনেক উন্নয়ন করেছে এলজিইডি। এজন্য রাঙামাটি এলজিইডি কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রকৌশলী প্রনব রায় চৌধুরী বলেন, সদর উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, প্রাথমিক বিদ্যালয়, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে এলজিইডি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাঙামাটি সদর উপজেলার কাপ্তাই–আসামবস্তী সড়ক নতুনত্বের ছোঁয়ায় ইতোমধ্যে পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এ সড়কে এ বছরেই রাস্তার কার্পেটিং কাজ শেষ হয়েছে এবং পুরো রাস্তায় যেনো মুগ্ধতা দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের।
রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শহীদুজ্জামান মহসিন রোমান বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা এবং রাঙামাটি বর্তমান সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার যদি আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন তাহলে পাহাড়ের প্রতিটি সেক্টরে উন্নয়ন বৃদ্ধি পাবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমদ শফি বলেন, বিগত ১৫ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে রাঙামাটির দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন উন্নয়ন করেছে এলজিইডি। পার্বত্য রাঙামাটি অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে পাহাড়ের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে অনেক সুযোগ–সুবিধা লাভ করবে। রাঙামাটির দুর্গম অঞ্চলগুলোর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছে এলজিইডি।