১৫ বছর ধরে বন্ধ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই ছাত্রাবাস

গ্রুপিংয়ের কারণে ছাত্রাবাস খুলতে চান না প্রশাসন না খোলায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ইমাম ইমু | বুধবার , ২০ নভেম্বর, ২০২৪ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রুপিংকে কেন্দ্র করে ১৫ বছর ধরে বন্ধ নগরের নাসিরাবাদে অবস্থিত চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুইটি ছাত্রাবাস। ২০০৯ সালে এই ছাত্রাবাস দুইটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা অনেকবার দাবি জানানোর পরেও এগুলো আর খুলে দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে প্রশাসন উদ্যোগ নেয় ছাত্রাবাস দুইটি খুলে দেওয়ার। সেই অনুসারে ছাত্রাবাসের সংস্কার কাজ শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের হলে উঠার ব্যাপারে ফরম সংগ্রহ করার জন্য নোটিশও দেওয়া হয়। কিন্তু অজানা কারণে সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। নবাব সিারজউদ্দৌলা ও সূর্যসেন ছাত্রাবাস দুইটিতে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীরা দাবি জানায় ছাত্রাবাস দুইটি খুলে দেওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রশাসনও খোলার ব্যাপারে একমত হন। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেন বলে জানা যায়। গত সোমবার ছাত্রাবাসে উঠার জন্য শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। তালিকা প্রকাশ না করায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।

জানা যায়, গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্রাবাসে সিট বণ্টন নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে সেমিস্টার ভিত্তিক আনুপাতিক হারে সিট বরাদ্দ দেওয়া হবে। এতে মেধা ও দূরত্ব বিবেচনায় সিট বণ্টন করা হবে। ছাত্রাবাসে উঠার সময় শিক্ষার্থীদের নিজেদের আসবাবপত্র নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং খাবারের খরচ বহন করতে বলা হয়। আসনের জন্য ৬০০ শিক্ষার্থী আবেদন করেন বলে জানা গেছে। গত সোমবার শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। গতকাল সেটার ভর্তি কার্যক্রম হওয়ার কথা ছিল। দুটি ছাত্রাবাস খোলার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা না খোলায় তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ছাত্রাবাসের তালিকা প্রকাশের দাবিতে দুপুর থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন বলে জানা গেছে। আবির নামে এক শিক্ষার্থী জানান, বাসা দূরে হবার কারণে অনেক টাকা যাতায়াতে চলে যায়। তাছাড়া রাস্তাঘাটে যানজটের কারণে পড়াশোনার সময়ও নষ্ট হয়। তাই আমাদের কথা চিন্তা করে দ্রুত হলের তালিকা প্রকাশ করা হোক। চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী গৌবর দাশ আজাদীকে বলেন, আমরা প্রশাসনের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে ছাত্রবাসে উঠার নোটিশ দেওয়া হয়। গত সোমবার তালিকা প্রকাশ করার কথা। কিন্তু করেনি। তাই আমরা তালিকা প্রকাশের দাবিতে পুরাদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম। প্রশাসন আমাদের কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। প্রশাসন ছাত্রাবাস খুলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন। ছাত্রাবাস না খুললে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।

জানা যায়, ছাত্রাবাস না খোলার জন্য শিক্ষার্থীদের একটা পক্ষ জেলা প্রশসানের কাছে দাবি জানান। এজন্য জেলা প্রশাসন ছাত্রাবাস না খোলার জন্য পলিটেকনিক প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মূলত শিক্ষার্থীদের মাঝে গ্রুপিংয়ের কারণে প্রশাসন ভয়ে ছাত্রাবাস খুলতে চান না বলে জানা গেছে। এক কর্মকর্তা জানান, ছাত্রাবাস খোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে নিষেধ আছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সহসমন্বয়ক ফাহিম হোসেন জানান, ছাত্রবাস খোলার সাধারণ শিক্ষার্থীদের যে নায্য দাবি তার সাথে একাত্মতা রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের। অবিলম্বে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মো. ইয়াছিন আজাদীকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা একমত। কিছু ব্যাপারে দ্বিমত আছে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের ছাত্রাবাসে যে আসবাবপত্র প্রয়োজন সেগুলো শিক্ষার্থীরা নিজেরা ব্যবস্থা করবে মর্মে ছাত্রাবাস খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধন্ত হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদের মাঝে গ্রুপিংয়ের কারণে সমস্যা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যানের জরিমানা ১২ কোটি টাকা
পরবর্তী নিবন্ধসেন্টমার্টিনে পর্যটন নীতিমালা শিথিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ