দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদী দখলে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করে বলা হয়েছে, এই নদীর আনু মাঝির ঘাট থেকে হালদার মোহনা পর্যন্ত এলাকা রক্ষা করতে অবৈধ দখলদারদের দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন গতকাল কর্ণফুলী নদীতে নৌকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে।
এ সময় বক্তারা বলেন, কর্ণফুলী নদীর কিছু কিছু অংশে অর্ধেকের বেশি ভরাট হয়ে গেছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিনের মধ্যে কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা না হলে নেতৃবৃন্দ সব প্রমাণপত্র নিয়ে হাই কোর্টে যাবেন বলেও উল্লেখ করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে কর্ণফুলী দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য প্রশাসন ৭টি নোটিশ দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি একটিও। প্রশাসনের উচ্ছেদ নোটিশের তোয়াক্কা না করে নতুন করে কর্ণফুলী দখল করা হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কর্ণফুলী দখল করে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেয়। বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদও করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে প্রশাসনের উচ্ছেদ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়ে। ২০১৬ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে প্রশাসন থেকে সাতটি উচ্ছেদ নোটিশ জারী করা হয়। কিন্তু এসবের একটিও কার্যকর করা হয়নি।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১০ সালে মামলাটি দায়ের হওয়ার পর উচ্চ আদালত থেকে কর্ণফুলী নদী ও তীর দখলকারী ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালে কর্ণফুলী তীর জরিপ করে ২১৮১ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে কর্ণফুলী নদী দখলকারী হিসাবে চিহ্নিত করে মাননীয় হাই কোর্টকে অবহিত করে। জেলা প্রশাসন প্রতিবেদন দেয়ার পর মামলা চলাকালে ২০১৬ সালে কর্ণফুলী নদী জাতীয় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডকে ১৫ বছরের জন্য জায়গা লিজ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তপক্ষ। অভিযোগ করা হয়, লিজ গ্রহীতাগণ কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে মাছ বাজার ও বরফকল নির্মাণকালে তা বন্ধ রাখতে এবং উচ্ছেদ করতে দফায় দফায় নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছরেও অবৈধ দখলদারেরা বহাল তবিয়তে কর্ণফুলী দখল করে রয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ফিরিঙ্গিবাজার মোড় থেকে মেরিনার্স পার্ক নতুন মাছ বাজার, ভেড়া মার্কেট থেকে বাকলিয়া চরের মোড় পর্যন্ত ৪৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নোটিশ প্রদান করা হয়। কিন্তু উক্ত নোটিশ প্রদানের দুই বছর অতিক্রান্ত হলেও রহস্যজনক কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়নি।
গতকাল সকাল ১১টার দিকে ফিরিঙ্গিবাজার অভয়মিত্র ঘাট থেকে শুরু হওয়া সংবাদ সম্মেলন চাক্তাই রাজাখালী খালের মোহনা হয়ে কালুরঘাট ব্রিজ ঘুরে বাংলাবাজার গিয়ে শেষ হয়। এ সময় চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সংগঠকবৃন্দ কর্ণফুলীর বিবর্ণ দশা সরেজমিন সাংবাদিকদের দেখানোর পাশাপাশি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সাংবাদিক চৌধুরী ফরিদ। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মনোকুমার দেব। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। উপস্থিত ছিলেন নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী, নির্বাহী সদস্য জাফর আহমদ, লোকমান দয়াল, জসিম উদ্দিন, এরাশাদ উল্লাহ প্রমুখ।