বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে বসন্ত ঋতুর এক মহাযোগ রয়েছে। বসন্ত এলেই মানুষের মনে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছে বারবার। ১৯৪৮ এর মার্চের ভাষার জন্য লড়াই, ১৯৫২ এর ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ এর মার্চ সেই সাক্ষীই দেয়। ক্ষমতা ও রাষ্ট্র পরিচালনার অভিপ্রায়ে যে রাজনীতি তা মানুষের সম্মিলিত প্রত্যাশা ও দাবির কাছে এক ফুকারে উড়ে যায়। এই দাবি যে কখন দানা বেঁধে ওঠে তা ঝানু রাজনীতিবিদদের হিসেব–নিকেষেও অনেক সময় ধরা পড়ে না। যেমনটি ধরা পড়েনি একুশে ফেব্রুয়ারির আন্দোলনের সময়। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৪৪ ধারা না ভাঙার সিদ্ধান্ত। তখন ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তিনটি পক্ষ : সাধারণ ছাত্র ও কর্মীরা এবং ছাত্র নেতাদের কয়েকজন, পৃথকভাবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে এসে। পরদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রসভায় এর যে প্রতিফলন ঘটেছিল তা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসেই শুধু নয়, বাঙালি জাতির পরবর্তীকাল ও বর্তমানেও বাংলাদেশের যে কোনো আন্দোলন–সংগ্রামের জন্য প্রেরণাদায়ী ও গুরুত্বপূর্ণ।
মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের যে প্রস্তুতি ছাত্ররা ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে চালাচ্ছিলেন, যে কর্মসূচি তারা গ্রহণ করেছিলেন তা ছিল নিয়মতান্ত্রিক। বরং মুসলিম আওয়ামী লীগ ও গুপ্ত কমিউনিস্ট পার্টি চেষ্টা করেছিল এই আন্দোলনের রাশ নিয়ন্ত্রণ করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে পরিচালিত করতে। কিন্তু তাদের চিন্তায় ভুল ছিল। তারা অনুধাবন করতে পারেননি মানুষ বিস্ফোরণের জন্য কী রকম উন্মুখ হয়ে আছে।