চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভাঙচুর ও সহিংসতার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুই মামলায় ৭ জন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৯০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমেদ এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন। চাঁদা দাবি ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় নিবিড় তদন্তের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। তবে মামলার বিষয়ে বাদী রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নূর আহমেদ এবং প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা কল রিসিভ করেননি। এদিকে শাটল দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র ৯ম পৃষ্ঠার ৪র্থ কলাম
করে ঘটনায় উপাচার্য তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানালেও কোনো তদন্ত কমিটি গঠন হয়নি। গত বৃহস্পতিবার রাতে তাণ্ডবের পরদিন সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য রোববার থেকে একাডেমিক সকল কার্যক্রম সচল থাকার আশ্বাস দিলেও গতকাল শনিবার শাটল চলাচল করেনি। পরদিন মানে আজ রোববার চলবে কিনা, ক্লাস–পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে কিনা, এসব বিষযে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
কর্তৃপক্ষ কিছু না জানানোয় শাটল চলাচল, ক্লাস–পরীক্ষা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল শিক্ষার্থীরা। গতকাল রাত ১০টার দিকে সহকারী প্রক্টর সৌরভ সাহা জয় শাটল ট্রেন চলাচল করবে বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, যথারীতি ক্লাস–পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শাটল ট্রেনও চলবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. আবিদুর রহমান শাটল ট্রেন চলবে বলে নিশ্চিত করেন।
পরীক্ষার ব্যাপারে চবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক চৌধুরী আমীর মোহাম্মদ মুছা বলেন, পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাসমূহ অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোনো বিভাগের পরীক্ষা নেওয়ার পরিস্থিতি না থাকলে নিজস্ব সিদ্ধান্ত থাকতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নুয়ে পড়া গাছের ডালের সঙ্গে ধাক্কা লেগে শাটল ট্রেনের ছাদে বসা শিক্ষার্থীরা আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এতে অন্তত ২৩ চবি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে এখনো তিনজন আইসিইউতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। দুর্ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসে পরিবহন সংকটের কথা বলে তাণ্ডবলীলা চালায়। উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তর, শিক্ষক ক্লাব ভাঙচুর করে তছনছ করে দেওয়া হয়। ঘটনার পরদিন শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনায় তিন মামলার কথা জানান উপাচার্য।
শাটল নিয়ে দুই রকম বক্তব্য : চবি শাটল ট্রেনের সমস্যা সমাধান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্ন করা হলে প্রতিবারই প্রশাসন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করে আসছে। সম্প্রতি শাটলে দুর্ঘটনার পরও উপাচার্য রেলওয়েকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছেন। গত শুক্রবার বিকালে চবি উপাচার্যের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, শাটলের ব্যাপারে আমরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে বলতে বলতে শেষ। এমনকি রেলমন্ত্রী আমাদের গত বছর বলেছিলেন ট্রেন দেবেন। আমরা পাইনি।
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে বলে সেভাবেই তারা ট্রেন চালান।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা তাদের (বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন) কথা অনুযায়ী ট্রেন চালাই। তারা ঠিক করে দেবে আমরা কীভাবে শাটল চালাব। তাদের উদ্যোগ নিতে হবে।