১৩ দিনে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩০৫ দর্শনার্থী

ডিসি পার্কের ফুল উৎসব

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শনিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

চারপাশে শুধু ফুল। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, গোলাপি, নানা রঙের ফুলের ঘ্রাণ ও সৌন্দর্যে ছেয়ে গেছে পার্কের পুরো এলাকা। আর এ সৌন্দর্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজার হাজার দর্শনার্থী। গতকাল শুক্রবার ছিল ফুল উৎসবের ১৩ তম দিবস। এদিন দুপুরের পর থেকে দলে দলে দর্শনার্থী ডিসি পার্কে ফুল উৎসবস্থলে প্রবেশ করতে থাকে। বিকেল হতেই পার্কের ভেতরে পা ফেলার জায়গা ছিল না। দেখা যায়, অনেকে ঘুরে ঘুরে ফুল দেখছেন আর ছবি তুলছেন। কেউ কেউ উপভোগ করছেন শিল্পীদের নাচগান। পার্কের ভেতরে অস্থায়ী খাবারের দোকান, শিশুদের বিনোদনের জায়গাগুলোতেও ভিড় ছিল।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১৩ দিনে অফলাইন আর অনলাইন মিলে টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার ৩০৫ জন দর্শনার্থী। শুধুমাত্র গতকাল শুক্রবার রাত সাত পর্যন্ত একদিনেই ৩৫ হাজার দর্শনার্থী টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করেছেন। এর বাইরে প্রতিদিন অতিথি, শিল্পীকলাকুশলী মিলে আরও দুই হাজারের বেশি দর্শনার্থী ডিসি পার্কে প্রবেশ করেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে জোড়া পুকুরের পশ্চিম পাশ সাজানো হয়েছে লাখের বেশি ফুলের চারা দিয়ে। দেশিবিদেশি ১৩৬ প্রজাতির ফুল রয়েছে এখানে। দেশি ফুলের মধ্যে রয়েছে ১৫ প্রজাতির গাঁদা, জবা, কৃষ্ণচূড়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন ফুল। উৎসবে যেসব ফুল রাখা হয়েছে তার বেশির ভাগই শীতকালীন বিদেশি প্রজাতির। বিদেশি ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ২৫ ধরনের গোলাপ, স্টকস, গ্যাজানিয়া, ক্যামেলিয়া, হলিহক, স্নেক, নেসটিয়াম, লিলিয়াম, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনোলিয়া, চেরি, জারবেরা, উইলো, উইস্টেরিয়া, কনকাম্বরি, হাইব্রিড জবাসহ আরও শতাধিক জাতের ফুল।

ফুলের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে মিলছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহারি রকমের পিঠাপুলিসহ নানান খাবারের স্বাদ। আছে শিশুদের জন্য আলাদা কিডস জোন। উৎসবে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ফেনী থেকে আসা এক দর্শনার্থী জানান, আমি বিকাল ৪টার দিকে আসি পরিবার নিয়ে, প্রবেশ পথে টিকিট কিনতে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। পরে টিকিট হাতে পেলেও প্রবেশ মুখে অনেক ভিড় থাকায় পার্কের ভিতরে যেতে সময় লাগে। চট্টগ্রাম ইপিজেডের আলহামিদি গ্রুপের সিইও মো. শাহজাহান ডিসি পার্কে বেড়াতে গিয়ে বলেন, ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে বের হয়ে পতেঙ্গা গিয়েছিলাম। সময় হাতে থাকায় ডিসি পার্কে ঘুরতে যাই। তবে দর্শনার্থীদের ভিড়ে প্রবেশ করতে কিছুটা কষ্ট হয়। ভেতরে যাওয়ার পর সেই কষ্ট ভুলে গিয়েছি। পার্কটি কল্পনার চেয়েও সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বারৈয়ারহাট থেকে আসা শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান মুনমুন বলেন, ফেসবুক এবং বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে ডিসি পার্কের ফুলের ছবি দেখে কৌতূহলী হয়ে উঠি। তাই নিজ চোখে দেখতে এলাম। এখানে এসে দেখার পর সত্যি লাখো রঙিন ফুলের সুবাসে আমি বিমোহিত হয়েছি। আমরা গত বছরও এ পার্কে এসেছিলাম।

সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ছুটির দিন ছাড়াও গড়ে প্রতিদিন ১৮ হাজার দর্শনার্থী ডিসি পার্কে প্রবেশ করছে। গতকাল শুক্রবারে দর্শনার্থীদের দ্বিগুণ চাপ ছিল।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশিবিদেশি ১৩৬ প্রজাতির বাহারি সব ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের ফুল উৎসব। তিনি বলেন, এক সময় মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপের অন্যতম আখড়া ছিল স্থানটি। তবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২০২৩ সালে ১৯৪ একর সরকারি খাস জমি অবৈধ দখল মুক্ত করে দুবাইয়ের মিরাকেল গার্ডেনের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে ডিসি পার্ক।

গত ৪ জানুয়ারি ‘ফুলের মতন আপনি ফোটাও গান’ স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এই উৎসব শেষ হবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ডিসি পার্ক। শুধু ফুল নয়, মাসব্যাপী এই উৎসবে ফুল ছাড়া ও প্রতিদিন থাকছে নানা ব্যতিক্রমী অনুষঙ্গ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংসদে কোনো নারী কোটা থাকা যাবে না : ইসলামী আন্দোলন
পরবর্তী নিবন্ধনামে ১০০, সেবা ৫০ শয্যার