ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, ম্যাগনলিয়া, শিউলি, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, চেরী, জাকারান্ডা, উইলো, উইস্টেরিয়াসহ দেশি–বিদেশি ১২৭ প্রজাতির কয়েক লাখ ফুলের সমারোহে সেজেছে ফৌজদারহাট ডিসি পার্ক। মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে উদ্ধার করা ১৯৪ একর খাস জায়গায় গড়ে তোলা এ পার্কে ২য় বারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে ফুল উৎসব।
‘ফুলের মতো আপনি ফুটাও গান’ এ প্রতিপাদ্যে এ ফুল উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে আগামি ২৫ জানুয়ারি। মাসব্যাপী এই ফুল উৎসব চলবে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ফুল উৎসবের উদ্বোধন করবেন সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
জানা যায়, ফু ল উৎসবে দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে নেদারল্যান্ডস থেকে বীজ এনে জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় ফুটানো সাড়ে পাঁচ হাজার টিউলিপ। ফুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে প্রত্যেক প্রজাতির ফুলের পাশে লেখা থাকবে তাদের নাম ও বৃত্তান্ত। মাসব্যাপী এ আয়োজনকে আরো আকর্ষণীয় করতে ফুলের প্রদর্শনীর পাশাপাশি কয়েকটি সেলফি জোন ও পর্যটকদের জন্য থাকবে সাম্পান বাইচের আয়োজন। আবহমান বাংলার ঐতিহ্য রক্ষার্থে থাকবে বিভিন্ন সময়ের ১৫টি নৌকা প্রদর্শনী। চট্টগ্রাম জেলার চিত্রশিল্পীদের প্রায় ২০০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর জন্য থাকবে। আগত দর্শনার্থীদের নিজেদের ছবির ক্যারিকেচার আঁকার ব্যবস্থা থাকবে। বিনোদন প্রেমীদের জন্য থাকবে সানসেট ভিউ পয়েন্ট, পিজিওন কর্ণার, স্যুভেনির শপ, দিঘীতে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা, লোনা পানির ঝর্ণা। থাকবে ট্যুরিস্ট শেড, নামাজের ব্যবস্থা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টলসহ পর্যাপ্ত শৌচাগারের ব্যবস্থা থাকবে। শিশু–কিশোরদের বিনোদনের জন্য নাগরদোলা, দোলনা, স্প্রিং টয়, মেরিগো রাউন্ড, দোলনা, প্লে পেন, ফুট ট্রাম্পোলাইনসহ থাকবে নানা আয়োজন। পুরো ফুল উৎসবকে ঝাঁকজমকপূর্ণ করতে আয়োজন করা হবে মাল্টি কালচারাল বিশেষ আয়োজন ঘুড়ি উৎসব, ফায়ার ওয়ার্কস, ভায়োলিন শো, পুতুল নাচ, জাদু প্রদর্শনী। এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার শিল্পীদের পরিবেশনায় থাকবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। গত বছরের ৪ জানুয়ারি সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে মাদকের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিয়ে জেলা প্রশাসন কর্তৃক ১৯৪ একর খাস জায়গা অবৈধ দখলদারদেরকে উচ্ছেদ করে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত জায়গায় মাত্র একমাসের মধ্যে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী চট্টগ্রামে প্রথম ফুল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সে সময় ১২২ প্রজাতির ফুলের চমকপ্রদ প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করা হয়েছিল ফুল উৎসব–২০২৩। দশ দিনব্যাপী এ ফুল উৎসবে প্রতিদিন গড়ে চল্লিশ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন ডিসি পার্ক। মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ জেলা প্রশাসনকে অনুপ্রেরণা যোগিয়েছে। এমন অনুপ্রেরণা থেকেই প্রতিবছর এ আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, ডিসি পার্কে দ্বিতীয়বারের মতো ফুল উৎসবের জোর প্রস্তুতি চলছে। আমরা পার্কটিকে সুসজ্জিত করতে কাজ করছি। যারা গতবার এসেছিলেন তারা এবার এলে পার্থক্য স্পষ্টই বুঝতে পারবেন। সব মিলিয়ে এবারের মাসব্যাপী উৎসবটি অনেক বেশি উপভোগ্য হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান বলেন, মাদকের রাজ্যকে ফুলের রাজ্যে পরিণত করা হয়েছে। এই ফুলের রাজ্যে দ্বিতীয়বারের মতো হতে যাচ্ছে ফুল উৎসব। মেলায় সব শ্রেণি–পেশার মানুষের পছন্দ হয় এমন সব অনুষঙ্গ যোগ করা হচ্ছে। আশা করি, এই উৎসব সবার ভালো লাগবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, মাসব্যাপী ফুল উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে। ডিসি পার্কটিকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে নানা কাজ করা হয়েছে। চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যকে উপজীব্য করেই সাজানো হয়েছে অনুষঙ্গগুলো। তবে গতবারের চেয়ে আরও অনেক বেশি আড়ম্বরপূর্ণ হবে এবারের উৎসব।