নয় মাস পর সেন্টমার্টিন নৌ–রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। মৌসুমের প্রথম দিন গতকাল সকাল ৭টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট থেকে ১,২০০ পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা দেয় এমভি বার আউলিয়া, এমভি কর্ণফুলী ও কেয়ারি সিন্দাবাদ নামের তিনটি জাহাজ। দুপুর পৌনে ২টার দিকে সেন্টমার্টিন ঘাটে গিয়ে পৌঁছায় পর্যটকবাহী জাহাজ তিনটি।
সরকার ঘোষিত ১২ দফা নির্দেশনা মেনে ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপনের সুযোগ থাকছে। জাহাজ কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রথমদিনের সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়েছিল এবং তিনটি জাহাজে মোট ১,২০০ যাত্রী দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হন।
সকালে ঘাটে গিয়ে পর্যটকদের স্বাগত জানান জেলা প্রশাসক আ. মান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহিদুল আলম, কক্সবাজার সদরের ইউএনও নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী এবং ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ। এ সময় যাত্রীদের সরকারি বিধি–নিষেধ সম্পর্কে নির্দেশনা বাস্তবায়ন তদারকি করেন তারা। এ সময় টিকেট কেটে ট্রাভেল পাস না করায় কেয়ারি সিন্দাবাদকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর অবশেষে সেন্টমার্টিন যেতে পারায় পর্যটকদের মাঝে দেখা গেছে বাধহীন উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। সবাই হৈ–হুল্লোড় করে জাহাজে উঠেন এবং যাত্রা পথ জুড়ে আনন্দ–উল্লাসে মেতে থাকেন। সেন্টমার্টিন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে জাহাজে উঠা ঢাকার সালেহীন আলম বলেন, স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভ্রমণে যাচ্ছি। সেন্টমার্টিন দ্বীপে একরাত থেকে পরেরদিন একই টিকিটে কক্সবাজারে ফিরে আসব। এর আগে কখনো সেন্টমার্টিন যাইনি, কেবল মানুষের মুখে শুনেছি। আজ গিয়ে সত্যিকার অর্থেই দ্বীপটি দেখার সুযোগ হবে।
কুমিল্লা থেকে আসা নাসরীন জাহান বলেন, জাহাজে চড়ে বিশাল বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়া সত্যিই রোমাঞ্চকর। সাগর আর নীল জলের সেন্টমার্টিন দেখার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কক্সবাজারে এসে সেন্টমার্টিন যেতে না পারলে ভ্রমণে মজা পরিপূর্ণ হয় না। এবার মজাটা দিগুণ হবে। চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের হামিদুল হক বলেন, আরও আগে কক্সবাজারে বেড়াতে আসার কথা। কিন্তু সেন্টমার্টিন রুট না খোলায় এতদিন আসা হয়নি। সেন্টমার্টিনকে উদেশ্যে করে কক্সবাজারে আসা। তবে টিকেট ম্যানেজ করতে বেশ বেগ পোহাতে হয়েছে।
‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (স্কোয়াব)-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, মৌসুমের প্রথম যাত্রার সব প্রস্তুতি আগে থেকেই সম্পন্ন ছিল। প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ পরিবেশে কোনো অঘটন বা বিব্রতর কর পরিস্থিতি ছাড়াই প্রথম দিনের যাত্রীরা নিরাপদে সেন্টমার্টিন পৌঁছেছেন। সেন্টমার্টিনবাসী তাদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে গ্রহণ করেছেন।
সেন্টমার্টিনের (ভারপ্রাপ্ত) ইউপি চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, পর্যটকবাহী তিনটি জাহাজের যাত্রীদের বরণ করার জন্য সকাল থেকে প্রস্তুত ছিলো সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। পর্যটকরা ঘাটে পৌঁছলে ফুল দিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, পর্যটক গমণকে কেন্দ্র করে কিছু সময়ের ব্যবধানে পুরো সেন্টমার্টিনজুড়ে এক ভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নির্জন দ্বীপটি হঠাৎ কোলাহলে পূর্ণ হয়ে উঠে।
উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর থেকে সেন্টমার্টিনে পর্যটক প্রবেশ উন্মুক্ত হলেও রাত্রিযাপন নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে এতদিন কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। এবারও নুনিয়ারছড়া জেটি থেকে চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যেতে পারবেন।











