১২টি আবাসিক এলাকার দুই তৃতীয়াংশ প্লটই খালি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

শিল্পায়নসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার সাথে সাথে চট্টগ্রামে আবাসন সংকট প্রকট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। উপশহর পর্যায়েও শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লেও আবাসন সংকট প্রকট হচ্ছে নগরীতে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ সংকট। গত ৬০ বছরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ১২টি আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে এসব আবাসিক এলাকার দুই তৃতীয়াংশ প্লটই খালি পড়ে আছে। এতে সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। শত শত প্লট খালি পড়ে আছে এক একটি আবাসিক এলাকায়। অপরদিকে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে দুইটি আবাসিক এলাকা প্রায় পরিত্যক্ত হতে চলেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শহরের লোকসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে। সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে আবাসন সংকটের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন- আসলে গত ১৩ বছরে সিডিএ কোন আবাসিক এলাকা করতে পারেনি। করার সুযোগও পাচ্ছে না। ভূমির মূল্যসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় সিডিএ’র পক্ষে আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা দিনে দিনে কঠিন হয়ে উঠছে। এতে নগরীর আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এযাবত গড়ে তুলেছে বারোটি আবাসিক এলাকা। ১৯৬৩ সালে কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার মাধ্যমে আবাসিক প্লট তৈরির কার্যক্রম শুরু করে সিডিএ। এতে প্লটের সংখ্যা ৫৮টি। পরবর্তীতে ১৯৬৫ সালে আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা গড়ে তোলা হয়। এখানে প্লটের সংখ্যা ৩৯১টি। এরপর চট্টগ্রামে বেশ কয়েক বছর কোন আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেনি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা। এখানে প্লটের সংখ্যা ৭৫৯টি। ১৯৭৭ সালে করা কর্ণেলহাট সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৬৮টি, ১৯৮৪ সালে করা সলিমপুর সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ৯০৪টি, ১৯৯৫ সালে করা কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে প্লটের সংখ্যা ৫১৭টি, ২০০০ সালে করা চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৮০টি, ২০০২ সালে করা চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ে প্লটের সংখ্যা ৮২টি, ২০০৬ সালে করা কল্পলোক আবাসিক এলাকায় প্রথম পর্যায়ে প্লটের সংখ্যা ৪২৩টি, ২০০৭ সালে করা কল্পলোক আবাসিক এলাকা দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৩৫৬টি, ২০০৮ সালে করা অনন্যা আবাসিক এলাকায় প্লটের সংখ্যা ১৪৭৮টি। ২০০৯ সালে ষোলশহর পূনর্বাসন এলাকায় সিডিএ ৪৮টি প্লট বরাদ্দ দেয় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের। চট্টগ্রামে গত ৬০ বছরেরও বেশি সময়ে সিডিএ সর্বমোট ৬৩৬৪টি প্লট তৈরি করে বরাদ্দ দিয়েছে। সিডিএ বিভিন্ন সময় আবাসিক এলাকা গড়ে তুললেও অধিকাংশ প্লটই খালি পড়ে আছে। এসব আবাসিক এলাকার দুই তৃতীয়াংশ প্লটে কোন বাড়িঘর নির্মিত হয়নি।
এদিকে অপরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়ায় সিডিএ সলিমপুর আবাসিক ও কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা প্রায় পরিত্যক্ত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা সলিমপুর আবাসিক এলাকায় ৯০৪টি প্লট থাকলেও অধিকাংশ প্লটই খালি পড়ে আছে। শহর থেকে দূরে ও নাগরিক সুবিধা না থাকায় এখানে কেউ বাড়িঘর নির্মাণে আগ্রহী নয়। এছাড়া নদীর ওপারে কর্ণফুলী আবাসিক এলাকা প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৫ সালে। প্লট রয়েছে ৫১৭টি। দুই যুগ অতিক্রান্ত হলেও একটি বাড়িও এখানে নির্মিত হয়নি।বাড়ি করার কোন পরিবেশও এখানে নেই। পানি সংকটে পুরো এলাকা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক প্রতিষ্ঠা হয় বারো বছরেরও আগে। অথচ বাড়িঘর নির্মিত হয়নি বললেই চলে। কল্পলোকে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বাড়ি নির্মাণ হলেও এখনো শত শত প্লট খালি। নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি নির্মাণ না করলে প্লট বরাদ্দ বাতিল আইন থাকলেও তা কার্যকর নয়।
চট্টগ্রামের আবাসন সংকট ঘুচাতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষও ব্যাপক ভূমিকা রাখার কথা। ১৯৫৬ সাল থেকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কাজ শুরু করলেও আবাসন সংকট ঘুচাতে প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখতে পারেনি। উক্ত সংস্থা চট্টগ্রামের বিভিন্নস্থানে মাত্র সাড়ে সাত হাজার প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। ছোট খাটো ও অপেক্ষাকৃত কম আয়ের মানুষদের জন্য এসব প্লট বরাদ্দ হয়। এগুলোর অধিকাংশ প্লট স্বল্প আয়ের মানুষের কাছ থেকে টাকাওয়ালারা কিনে নিয়ে বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। একইসাথে এই সংস্থা ১৭৭১টি ফ্ল্যাটও বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এখনো এসব ফ্ল্যাট ক্রেতাদের হস্তান্তর করা হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, আনোয়ারা ইকোনমিক জোনসহ চট্টগ্রামের বাইরে কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। শিল্পায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাজার হাজার মানুষ এসব এলাকায় কাজ করেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট থাকায় তারা সকলেই শহরে ছুটেন। থাকেন শহরে। এতে নগরীতে প্রতিদিনই লোকসংখ্যা বাড়ছে। গড়ে ১০ শতাংশ মানুষ বাড়ছে প্রতি বছর। ফলে নগরীর আবাসন সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশহরে নতুন করে সাত স্থানে হবে গণশৌচাগার
পরবর্তী নিবন্ধস্বামীকে আটকে রেখে পোশাক কর্মীকে ধর্ষণ