১১ তরুণের প্রতিবাদ ও ১৪০ টাকায় এক ডজন ডিম

হাসান আকবর | শনিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

দেশের ডিমের বাজার অস্থিতিশীল করার সিন্ডিকেটের কারসাজির বিরুদ্ধে ওরা ১১ জন যেন প্রতিবাদের দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কিছুটা কমে ডিম বিক্রি করে তারা জনতার আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করছেন। মফস্বলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ডিম সংগ্রহ করে নগরীতে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। গতকাল দ্বিতীয় দিন নগরীর চকবাজার মোড়ে বিকেল থেকে ওই ১১ জন ১৪০ টাকা ডজন দরে ডিম বিক্রি করেন। সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজিতে পাত থেকে ডিম বাদ দেয়া শত শত মানুষ লাইন ধরে ডিম কিনে ঘরে ফিরেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা প্রায় চার কোটি। দেশের খামারগুলোতে দৈনিক ডিম উৎপাদন হয় প্রায় সাড়ে চার কোটি। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত লেয়ার খামারের সংখ্যা ২০ হাজার ৪৬৪। সরকারি এ হিসেবে দেশের চাহিদার তুলনায় ডিম উৎপাদন বেশি হলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজিতে বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এক্ষেত্রে দেশের বড় কয়েকটি ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র জড়িত। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, দেশের ডিমের চাহিদার ৮০ শতাংশ উৎপাদন করছেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। যা মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত ঘুরে বাজারে আসে। আর খামার থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছা পর্যন্ত হাত ঘুরতে ঘুরতে বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ঘাটে ঘাটে মুনাফা হলেও শেষ পর্যন্ত পকেট কাটা হয় ভোক্তার।

দেশে ডিমের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয় কিছুদিন আগ থেকে। ১২০ টাকা দরে যে ডিম (প্রতি ডজন) বিক্রি হচ্ছিল তা গিয়ে ঠেকে ১৭০ টাকায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার উদ্যোগ নিলে ব্যবসায়ী এবং আড়তদারেরা উধাও হয়ে যায় বাজার থেকে। অবশ্য সরকারি অভিযানের পর বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। ডজনে ২০ টাকা কমে ১৫০ টাকা দরে ডিম পাওয়া যায়। অবশ্য একেবারে খুচরা পর্যায়ে এখনো চড়া ডিমের দাম। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করে দেয়। প্রতিটি ডিমের দাম উৎপাদন পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা (ডজন ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা) বেধে দেওয়া হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের ১১জন যুবক সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে কমে এক ডজন ডিম ১৪০ টাকা দরে পৌঁছে দিচ্ছেন ভোক্তার হাতে।

ভেঙে যাক সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের শকুন সিন্ডিকেট, স্বস্তিতে বেঁচে থাকুক বাংলার নিরীহ জনগণ’প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে তারা ১৪০ টাকা ডজনে ডিম বিক্রি শুরু করেন বৃহস্পতিবার থেকে। গতকাল নগরীর চকবাজার মোড়ে ডিম বিক্রি করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে ওরা ১১ জনের নেতৃত্বে রয়েছেন মোহাম্মদ আরিফ। তিনি একজন পরিবহন ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। বাকি সদস্যদের মধ্যে মোহাম্মদ ইমরান একজন মিউজিসিয়ান, রেজাউল করিম একজন ব্যবসায়ী, মোহাম্মদ সেলিম একজন ছাত্র, মোহাম্মদ সোহেল একজন বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কর্মী, মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মোহাম্মদ আব্দুস শুক্কুর একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে এডমিনে কর্মরত, মাসুদ আহমেদ একজন গাড়ি চালক, ইঞ্জিনিয়ার মো. ইমাম হাসান একটি কনস্ট্রাকশন ফার্মে কর্মরত, মো. জিয়াউদ্দিন বাবলু একজন কম্পিউটার এক্সেসোরিজ ব্যবসায়ী। ওরা ১১ জন চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশের উপজেলার বিভিন্ন খামার থেকে ভোরে ডিম সংগ্রহ করে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষকে অগ্রাধিকার দিয়ে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের মাঝে ১৪০ টাকা ডজনে বিক্রি করছেন।

গতকাল চকবাজার মোড়ে মোট ৬০০০ ডিমের মধ্যে ৪৯৫ ডজন বা ৫৯৪০টি ডিম ক্রেতাদের হাতে ১৪০ টাকা ডজন দরে বিক্রি করা হয়। ৬০টি ডিম ভেঙে নষ্ট হয়ে যায় বলে উদ্যোক্তারা জানান। তারা বলেন, আমাদের মুনাফার দরকার নেই। আবার আমরা লসও দিচ্ছি না। শুধু শ্রমটা দিচ্ছি। আমাদের সামান্য শ্রমের বিনিময়ে সাধারণ মানুষের পাতে যে অতি সাধারণ পণ্য ডিম তুলে দিতে পারছিএটাই আমাদের সান্ত্বনা।

তারা বলেন, মুনাফা আমাদের টার্গেট নয়, আমাদের মূল টার্গেট হচ্ছে সিন্ডিকেট ভাঙা। আমাদের দেখে যদি দেশের প্রতিটি অঞ্চলে উদ্যোমী যুবকেরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগিয়ে আসেন, তাহলে বাজারে কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না।

ওরা ১১ জনের দলনেতা গতরাতে দৈনিক আজাদীকে জানান, আজ বিকেল ৪টা থেকে নগরীর কোতোয়ালী মোড়ে প্রতি ডজন ডিম ১৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হবে। তিনি জানান, তাদের কার্যক্রম দেখে খামারিরা যথেষ্ট আনন্দিত। তারা কিছুটা কম দামে তাদের হাতে ডিম তুলে দিচ্ছেন। তাই তারা ১০ টাকা কমে ডিম ভোক্তাদের দিতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযাত্রীদের চাহিদা বিবেচনায় আবার বিশেষ ট্রেন
পরবর্তী নিবন্ধক্যান্সার থেকে কিছুটা সুস্থ, ডেঙ্গুতে মৃত্যু